ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে ভর্তি আছেন ১০ জন। এদের জনের মধ্যে আটটি শিশু।
তবে এটি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নয়।
সেন্টারের সমন্বয়ক চিকিৎসক বিলকিস বেগম নিউজবাংলাকে জানান, ‘দেশে লকডাউন পরিস্থিতি চলাকালে ভিকটিমের সংখ্যা কম ছিল। শেষ দিকে আবার বেড়েছে। লকডাউন ছাড়ার পর আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন সময়ও গেছে ৩০-৩১ জনের মতো ভিকটিম একসঙ্গে ভর্তি ছিল। তখন আমাদের বেড সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে।’
নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী, আর্থিক অস্বচ্ছলতাসহ বেশ কিছু কারণে ঘটনার সংখ্যা কমছে না বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৩টি, যেখানে ২০১৯ সালে ছিল ৩৭৯ টি। ২০২০ সালে প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩৪৯ জন নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৮৪টি, এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৪ জন, মামলা হয়েছে ১২৫টি।
দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কলের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের টিঅ্যান্ডআইএম বিভাগের ৯৯৯ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ।
জরুরি সেবা নম্বরে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ১০ মাসেই এক হাজারের বেশি কল এসেছে। ২০১৯ সালে কল এসেছে ছয় হাজার ২৮৯টি।
তবারক উল্লাহ বলেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে নারী ও শিশুর উপর সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।’
জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ায় কলের সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় যত মামলা হয়, তাতে আসামিদের সাজার পরিমাণ খুবই কম বলে জানতে পেরেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা টিআইবি।
নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী ১৬ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৬০টি ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে এক শতাংশ ক্ষেত্রে সাজা হয়েছে। বাকি ৯৯ শতাংশের সাজা হয়নি।
এই ভুক্তভোগীরা সবাই সরকারি ৯টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসস সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফলে তাদের নির্যাতনের প্রমাণ ছিল।
এই পরিসংখ্যানকে আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ‘উদ্বেগজনক একটি চিত্র’ হিসেবে দেখছেন ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সালমা আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আইন আছে, প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। কিন্তু তারপরও নির্যাতন কমছে না। কারণ, এসব আইনে যথাযথ প্রয়োগ নেই। সমাজে নারী প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই সহিংসতা কমবে না।’