মাসিক ঋতুস্রাবের সময় কর্মজীবী নারীদের ছুটি দেয় কিছু দেশ। এ তালিকায় এগিয়ে আছে জাপান। পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে এ ধরনের ছুটি চালু হয় সাত দশক আগে।
কর্মজীবী নারীদের জন্য জাপানে মাসিককালীন ছুটি চালু করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে। এরপর এ ধরনের ছুটি চালু করে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে এই ছুটি কার্যকর হয় ১৯৫৩ সালে।
চীন, ভারতেও মাসিকের সময় ছুটির বিধান আছে। তবে উল্লিখিত সব দেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক নারীই এ ছুটি নেন না।
এ বিষয়ে জাপানের কর্মজীবী নারী সাচিমি মোচিজুকি সিএনএনকে বলেন, ‘জাপানে মাসিককে খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়। অনেকটা ট্যাবুর মতো। কোনো পুরুষের সঙ্গে আমি এটি আলোচনা করতে চাই না।’
ছুটি চাওয়ার জন্য অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীদের কাছে যেতে হয় বলে জাপানের বেশিরভাগ নারীই এই ছুটি নিতে চান না।
জাপানে ছুটি চালুর প্রথম দিকে ১৯৬৫ সালে ২৬ শতাংশ নারীকর্মী এই ছুটি নিয়েছিলেন। বিশেষত যাদের মাসিকের জটিলতা আছে, তাদের মধ্যে এই ছুটি নেয়ার হার বেশি ছিল। তবে পরে ছুটি নেয়ার হার কমে আসে।
২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটিতে মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ নারী মাসিককালীন ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন।
মাসিকের ছুটি নেয়ার হার কমেছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। ২০১৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী ওই বছর দেশটিতে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নারী এই ছুটি নিয়েছিলেন, যা ২০১৭ সালে কমে এসে দাঁড়ায় ১৯.৭ শতাংশে।
জাপানের অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভলেপমেন্টের (ওইসিডি) প্রধান ইয়ামিকো মুরাকামি বলেন, ‘জাপানের সব প্রতিষ্ঠানেই মাসিককালীন ছুটির বিধান থাকলেও এই ছুটি নিলে কর্মীদের বেতন দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আবার মাসিককালীন ছুটিও যে আছে, তা জানেন না অনেক নারী কর্মী।’
এই ছুটি নিয়ে নারী অধিকারকর্মীদের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে। বেশিরভাগ অধিকারকর্মী মনে করেন, এটি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে সহজ করবে। আবার কারও মতে, মাসিককালীন ছুটির দোহাই দিয়ে নারীদের পুরুষের তুলনায় কম উৎপাদনশীল হিসেবে দেখা হতে পারে। এতে করে তাদের চাকরি পেতেও ঝামেলা হতে পারে।
মাসিককালীন ছুটি নিয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর চেষ্টা করছে জোমাটো নামের ভারতের একটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিপেন্দার গয়াল বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে মাসিককালীন ছুটি চাওয়া নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। ছুটির দরকার হলে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বলা যায় এমন কাউকে জানালে বা ইমেইলে অবহিত করলেই চলবে।’
ভারতে নারীদের মাসিক নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি রয়েছে। দাসরা নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের জরিপ অনুযায়ী, মাসিকের কারণে মেয়েরা বছরের প্রায় ২০ শতাংশ দিন স্কুলে যায় না। শতকরা ৭০ ভাগ মা মাসিককে একটি ‘নোংরা’ বিষয় মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অনেক দেশে মাসিককালীন ছুটির নীতিমালা নেই বললেই চলে।