করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বে বাল্যবিয়ে বাড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। আর এর ফলে গত ২৫ বছরে বাল্যবিয়ে বন্ধে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা উল্টো পথে যাত্রা শুরু করতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সারা বিশ্বে লৈঙ্গিক সমতার ওপর করোনা মহামারি কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। গত বৃহস্পতিবার তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ২৫ লাখ বেশি শিশুকে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা মহামারি।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, প্রতি বছর এক কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়।
তাদের অনুমান ছিল আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। কিন্তু অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাবের কারণে এটি অনেক দ্রুত বেড়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শক কারেন ফ্লানাগান বলেন, গত ২৫ বছরে প্রায় ৮ কোটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে যে অগ্রগতি ছিল তা থমকে গেছে।
তিনি বলেন, ’বাল্যবিয়ের কারণে নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এর ফলে তারা বিষন্ণতায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া তাদের জীবনভর সহিংসতার শিকার হতে হয়। কখনো কখনো এতে তাদের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে, এমনকি মৃত্যু্ও হচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, মহামারির কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। মেয়েশিশুদেরকে স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মেয়েশিশুরা।
বাল্যবিয়ে অবসানে কাজ করা গোষ্ঠী গার্লস নট ব্রাইডস মনে করছে, ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসতে থাকা অর্থনীতি ও মহামারিতে স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে বাল্যবিয়ের ঘটনা বাড়ছে।
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ফেইথ পাওয়েল বলেন, ‘শিক্ষা নারীদের জন্য একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।'
মেয়েশিশুদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে আরো বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা, তদারকি ও সামাজিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ২০২০ সালেই আরো পাঁচ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর গর্ভধারণের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১০ লাখ শিশু। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ২০২৫ সালের মধ্যে ছয় কোটি ১০ লাখ শিশু বাল্য বিয়ের শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট বিল চেম্বারস বলেন, ’মহামারির মানে হলো আরো বহু পরিবারের দরিদ্র হয়ে পড়া। পরিবার চালানোর জন্য অনেক মেয়েশিশু কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। ছেলে শিশুদের তুলনায় এদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা কম।‘
তিনি বলেন, 'খাবারের অভাব ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সহিংসতা ও যৌন হয়রানির ঝুঁকি। অনেক অভিভাবক মনে করছেন, বয়স্ক লোকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেয়া ছাড়া তাদের সামনে তেমন কোনো বিকল্প নেই।'
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবিক সংকট চলছে এমন দেশগুলিতে বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেশি। বাল্যবিয়ে বেশি এমন ১০টি রাষ্ট্রের মধ্যে নয়টিই ভঙ্গুর রাষ্ট্র।
বাল্যবিয়ে বন্ধে ও লৈঙ্গিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে সহায়তা বাড়ানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি।