যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন শুরুর পর নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি কমিউনিটির সদস্যরা। এ সময়ে পরিণত বয়সী বিবাহিত ও একসঙ্গে বসবাসকারী গে, লেসবিয়ানরা প্রতিদিনকার জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন দেখেননি। তবে প্রতিকূল বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণদের।
এক প্রতিবেদনে তাদের সে কাহিনি তুলে ধরেছে দ্য গার্ডিয়ান। সংবাদমাধ্যমটি এলজিবিটি কমিউনিটির ২০০ জনেরও বেশি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে।
অনেকে জানিয়েছেন, লকডাউনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েন তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলজিবিটিদের প্রতি ভীতি, ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি।
এলজিবিটি তরুণরা জানান, লকডাউনের অর্থ পরিবারের সঙ্গে থাকা। সে সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের আচরণ অসহযোগিতামূলক বা শত্রুভাবাপন্ন ছিল।
২৪ বছর বয়সী বাইসেক্সচুয়াল কেইট জানান, লকডাউনের সময় তাকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর ফ্ল্যাট ছেড়ে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আয়ারশায়ারে শৈশবের বাড়িতে ফিরতে হয়। সেখানে তার লৈঙ্গিক পরিচয় গোপন করতে হয়েছিল।
ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজার ও ভাস্কর কেইট বলেন, ‘আশ্রয়ের জন্য অন্য কারো কাছে বা কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকায় আমার সত্তার বিরোধিতাকারী মা-বাবার সঙ্গে থাকতে হয়েছে, যা কঠিন ছিল।’
অনেক ট্রান্সজেন্ডার জানান, আত্মীয়-স্বজনরা তাদের জেন্ডার পরিচয়ের প্রতি সম্মান দেখান না। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ট্রান্সজেন্ডার দম্পতি হেস্টার ও নিক।
লকডাউনে ইংল্যান্ডের সাফোকে হেস্টারের বাড়িতে ছিলেন তারা। এ দম্পতি জানান, হেস্টারের মা-বাবা প্রায়শই তাদের ভুল জেন্ডার পরিচয়ে সম্বোধন করেছে।
হেস্টার বলেন, ‘আমার মায়ের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে ভীতি যথেষ্ট। এ কারণে আমরা জেকে রাউলিং ও জেন্ডার নিরপেক্ষ টয়লেটের মতো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলেছি।’
এলজিবিটি কমিউনিটির কয়েকজন জানান, লকডাউনে পরিবারের কাছ থেকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা চেয়েছিলেন তারা।
এ বিষয়ে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের ৩১ বছর বয়সী গে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হাজ হুসেন জানান, লকডাউনের আগে থেকে পরিবারের সঙ্গে ছিলেন তিনি। সে সময় আশপাশের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশের কোনো বিকল্প নেই তার কাছে।
হাজ জানান, মা, বাবা, বোন ও ভাইদের কাছে পরিচয় প্রকাশের পরও তাকে দ্বৈত জীবনযাপন করতে হয়েছে। বৃহত্তর পরিবার ও স্থানীয় মসজিদের মুসল্লিদের কাছে তার পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছে।
এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তার মাকে বলেন, এ জীবনটাকে ভনিতার মনে হচ্ছে তার কাছে এবং তিনি ওই লোকজনের কাছাকাছি আর থাকতে পারছেন না।
সে সময় হাজকে তার মা বলেন, ‘যাকে ইচ্ছা তাকে তুমি নিজের পরিচয় দিতে পারো; আমি তোমার পাশে দাঁড়াব। তুমি আমার ছেলে এবং আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
হাজ বলেন, ‘আমাকে গে হিসেবে মেনে নিতে মাকে এখনো বেগ পেতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি। আমি ভালো থাকি, এটাই মায়ের একমাত্র চাওয়া।’