যেকোনো মানবিক সংকট নারী ও পুরুষের জীবনে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ও ব্যতিক্রম নয়। এক্স ক্রোমোজোম ও এস্ট্রোজেনের মতো সেক্স হরমোনের কারণে ভাইরাসের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দেখা গেছে। তবে এ ধরনের শারীরিক সুবিধা ম্লান হয়ে গেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাবের কাছে।
করোনা নিয়ে আলজাজিরার সিরিজ প্রতিবেদনের একটিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজটি তৈরি করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে বলা হয়, করোনার ধকল ব্যাপকভাবে সামলাতে হচ্ছে নারীদের।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এক বক্তব্যেও প্রতিবেদনে উল্লেখিত মন্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, নারী ও মেয়েদের ওপর কোভিড-১৯-এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিপর্যয়কর। এ মহামারী কয়েক দশকে জেন্ডার সমতায় যে সীমিত ও ভঙ্গুর উন্নতি হয়েছিল, সেটাকেও উল্টে দিচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে কোভিড-১৯ ছড়ানোর পর চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে বিশ্বজুড়ে। ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের বেশি কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই হবে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা।
এমন ধরনের কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিন্ন প্রভাব রয়েছে নারীদের ওপর। তারা মোট বৈশ্বিক কর্মশক্তির ৩৯ শতাংশ হলেও কোভিডে চাকরি হারানো মোট কর্মীদের ৫৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানী অবনি আমিন বলেন, 'নারীদের ওপর সামগ্রিক প্রভাব হলো অনিরাপত্তা ও চাকরি হারানো। কারণ নারীরা সাধারণত অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যেগুলোতে কোনো অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা সুফল নেই।'
বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে কর্মশক্তির ৯০ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত। এ কর্মশক্তির বড় অংশই নারী, করোনার কারণে যাদের চাকরি বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীদের কাজ হারানোর ঝুঁকি বেড়েছে ১.৮ গুণ। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর বিজ্ঞানী অবনি আমিন বলেন, 'নারীরা সাধারণত অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এ কারণে অর্থনৈতিক অবনমন শুরু হলে তারাই প্রথম চাকরি হারান।'
নারীদের ঝুঁকি শুধু অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা স্বাস্থ্য খাতে বৈশ্বিক কর্মশক্তির ৭০ শতাংশ এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকেন। এ কারণে তাদের আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
জাতিসংঘের লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতাবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের নথি অনুযায়ী, স্পেন ও ইতালিতে কোভিডে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৭২ ও ৬৬ শতাংশই নারী।