বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জায়েদ খানের কুমিরের পেটে যাওয়ার শঙ্কা কতটা ছিল

  •    
  • ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ২০:২৩

স্থানীয় লোকজন নিউজবাংলাকে জানান, কালীগঙ্গা নদীটি অনেক বছর ধরে ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এর বেশির ভাগ অংশই শুকিয়ে যায়। কেবল মধ্যবর্তী অংশে কিছু পানি থাকে। ছোট এ নদীতে কুমির আছে, এমন কিছু তারা শোনেননি।

‘সোনার চর’ নামে সিনেমার শুটিংয়ে পিরোজপুরের কাউখালী গিয়েছিলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। শুটিং স্পট থেকে নিয়মিত ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে গত কয়েক দিন ধরে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এ অভিনেতা।

এসব ছবিতে জায়েদকে কখনও দেখা গেছে শীতের সকালে নৌকার মাঝি হিসেবে, কখনও তিনি বানাচ্ছেন কুঁড়েঘর, আবার কনকনে শীতের মাঝে নদীতীরের কাদামাটিতে তার বিপর্যস্ত ভঙ্গি জুগিয়েছে আলোচনার খোরাক।

সবশেষ জায়েদ খান কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, সিনেমার প্রয়োজনে তিনি কুমিরের ভীতি উপেক্ষা করে ঝাঁপ দিয়েছেন বিপজ্জনক কালীগঙ্গা নদীতে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সিনেমার একটি দৃশ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে পালাচ্ছিলেন জায়েদ। এর অংশ হিসেবে পানিতে ঝাঁপ দেন জায়েদ। তার ভাষায়, ‘কুমির থাকা নদীতে’ ঝাঁপ দিতে তিনি পরোয়া করেননি। এরপর অনেকটা পথ সাঁতরাতে হয়েছে তাকে।

সোনার চর সিনেমার শুটিংয়ের সময় কালীগঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন জায়েদ খান। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠকে জায়েদ খান বলেন, ‘একটি দৃশ্য ছিল কালীগঙ্গা নদীতে আমাকে লাফ দিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই জানি, এই নদীতে কুমির আছে, আমরা দেখেছি। ফলে লাফ দেব কি না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।

‘যেহেতু অভিনয় করতে এসেছি। ঝুঁকি নিতেই হবে। অবশেষে লাফ দিলাম। তারপর অনেকটা পথ সাঁতরাতে হলো। খুবই কষ্টকর একটি দৃশ্য ছিল। ফাইনালি ভালোভাবে শেষ হয়েছে।’

জায়েদ খান যে নদীকে কুমির-সংকুল বলছেন, সেটি সত্যিই তেমন কি না, তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে পিরোজপুর জেলার কালীগঙ্গা নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পিরোজপুর জেলা শহরের প্রবেশপথ হুলারহাট লঞ্চঘাট কালীগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত। নাজিরপুর উপজেলা সদর, শ্রীরামকাঠী বাজারও এ নদীর পাড়ে। নদীটি বলেশ্বর থেকে সূচিত।’

অন্যদিকে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের লেখা বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি বইয়ে এই নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, কালীগঙ্গা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৩০ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কালীগঙ্গা নদীকে পরিচিত করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০ নম্বর নদী হিসেবে।

এ বইয়ে আরও বলা হয়, কালীগঙ্গা নদীটি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শঙ্করপাশা ইউনিয়নে প্রবহমান শালদহ নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা শ্রীরামকাঠী, গুয়ারেখা ও কালাখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পিরোজপুর সদর উপজেলার শরিকতলা-ডুমুরিতলা ইউনিয়নে প্রবাহিত কচা নদীতে পড়েছে। নদীটিতে সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকে। নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

পিরোজপুরে সোনার চর সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্যে জায়েদ খান। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় লোকজন নিউজবাংলাকে জানান, নদীটি অনেক বছর ধরে ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে, বিশেষ করে শীত মৌসুমে এর বেশির ভাগ অংশই শুকিয়ে যায়। কেবল মধ্যবর্তী অংশে কিছু পানি থাকে।

এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ছোট এই নদীতে কুমির আছে, এমন কিছু তারা শোনেননি।

কালীগঙ্গা নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. সজীব সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই নদীতে কুমির গত ১৫ বছরেও দেখা যায়নি বা শুনিনি। আমাদের চরে জায়েদ খানের শুটিং হয়েছে। আমরা সেটা দেখেছি, কিন্তু সেখানে কুমির ছিল এমন কোনো তথ্য আমরা জানি না।’

কাউখালীর রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি এই নদীতে অনেক আগে কুমির ছিল, তাও প্রায় ৩০ বছর আগের কথা, তবে বর্তমানে আছে কি না, সঠিক বলতে পারি না।’

জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারীর কাছেও কালীগঙ্গা নদীতে কেউ কুমির দেখেছে, এমন তথ্য নেই।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা উপকূল অঞ্চলে। তা ছাড়া সাগর ও সুন্দরবনের কাছের জেলা। সে ক্ষেত্রে কুমির থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়, থাকতে পারে, তবে কেউ দেখেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

নায়ক জায়েদ খানের বন্ধু জুবায়ের আল মামুনও মনে করছেন এমন দাবিটি তথ্যভিত্তিক নয়।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধু জায়েদ খানের শুটিং বেশ কয়েক দিন ধরে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে চলছে, আমরাও দেখতে গিয়েছি। তবে কেউ কুমির দেখেছেন এমন তথ্য আমাদের জানা নেই।’

জায়েদ খান অবশ্য এখন বলছেন, স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে তিনি নিজেও কখনও কালীগঙ্গা নদীতে কুমির দেখেননি, তবে তিনি শুনেছেন।

আলোচিত এ অভিনেতা শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরোজপুরে সোনার চর সিনেমার শুটিংয়ে কালীগঙ্গা নদীতে একটা সিকোয়েন্সে নদীর মাঝখানে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। এরপর অনেক দূর সাঁতরে উঠেছি এবং ওই নদীতে কুমির আছে এটা প্রকাশ পেয়েছে।’

নদীতে কুমির থাকার তথ্য দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি তো ওখানে, আমি তো সব জানি। ওখানে স্থানীয় অধিবাসীরা বলছিল কয়েক দিন আগে চরে এসে একটা গরু নিয়ে গেছে কুমিরে। ওখানে কুমির আছে আমরা জানি।’

তাহলে লোকজনের কথা শুনে এমনটি বলেছেন কি না, প্রশ্ন করলে জায়েদ খানের জবাব, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, রাইট রাইট।’

এ বিভাগের আরো খবর