নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো এক ব্যক্তির ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ওই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়েছে ফেসবুকে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা কোন বাহিনীর সদস্য তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে ওই ব্যক্তিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য বলে দাবি করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তথ্যও জানানো হয়েছে।
তবে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, আলোচিত ওই ব্যক্তি আনসার বাহিনীর সদস্য। তিনি আইনবহির্ভূত কোনো কাজ করেননি।
ফেসবুকে ভাইরাল ওই ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান হিসেবেও প্রচার করছেন অনেকে। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে আল-আমিন বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপপ্রচারের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার জার্সি পরে অস্ত্র হাতে নয়াপল্টনে তৎপর আলোচিত ব্যক্তির নাম মাহিদুর রহমান বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো ওই ব্যক্তি পল্টন থানার অন্তর্ভুক্ত আনসার সদস্য মাহিদুর রহমান। জানমাল রক্ষার্থে যেকোনো পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিতে পারেন। আমি নিজেও সিভিল পোশাকে ছিলাম। এটা অন্যায় নয়।’
এর আগে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বরাতে জানায়, আলোচিত ওই ব্যক্তি ডিবির সদস্য। তাকে ক্লোজ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপ্লব কুমার সরকারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি, খুদেবার্তারও সাড়া দেননি।
অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার জার্সি পরা ওই ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান হিসেবেও প্রচার চলছে।
এতে বিস্ময় ও ক্ষোভ জানিয়েছেন আল-আমিন রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা খুবই অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। ক্যাম্পাসের বাইরের একটি ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে। বিএনপি মিথ্যাচার আর গুজবের রাজনীতি করে। তারাই এ কাজ করেছে।’
ব্রাজিল সমর্থক আল-আমিন রহমানকে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গুলি চালানো ব্যক্তি হিসেবে প্রচার চলছে ফেসবুকে (বাঁয়ে)
এই ছাত্রনেতা দাবি করেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রথম অপপ্রচার চালানো হয়। এরপর বিএনপির বিভিন্ন পেজ এটি ছড়িয়ে দেয়।
আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে পাঁচটি ফেসবুক পেজের উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় জিডি করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন আল-আমিন। এতে তিনি নিজেকে ব্রাজিল সমর্থক উল্লেখ করে ব্রাজিলের জার্সিতে নিজের ছবিও শেয়ার করেছেন।
আল-আমিন লেখেন, ‘১০ তারিখ রাজধানী শহর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত দেশবিরোধী চক্রের নাশকতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশের সাদাপোশাকে অস্ত্র হাতে এবং হেলমেট পরা এক সদস্যের ছবিকে দেশে-বিদেশে আমার ছবি বলে বিরোধী দলের গুজববাহিনীর লোকজন ফেসবুকে ভাইরাল করে প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আমার বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচার করছে।
‘এ তালিকায় লন্ডনে পালিয়ে থাকা তারেক গংয়ের প্রোপাগান্ডা সেলের লোকজনেরও পরিচয় পাওয়া গেছে। হাস্যকর ব্যাপার হলো, আমি ছোটবেলা থেকে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সমর্থক। আমার শত্রুও তা জানে। সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরে আছেন আর্জেন্টিনার জার্সি।
‘উপরন্তু, আমার উচ্চতা ছয় ফুট। ছবিটা ভালো করে দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। পেছনে পুলিশের গাড়িও আছে। এ ছবি বিশ্লেষণ করে প্রকৃত ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করতে বায়োলজি বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। একটু পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট।’
এদিকে আর্জেন্টিনার জার্সি পরিহিত ওই ব্যক্তি নিজেকে আনসার সদস্য পরিচয় দিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘আমি পল্টন থানায় আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত আছি। ঘটনার আগে দুপুরের খাবারের পর আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের বিশেষ অ্যালার্ম বেজে ওঠে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রতি ওসি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে যখন অ্যালার্ম বেজে উঠবে তখন যে যে অবস্থায় থাকবে, সে অবস্থায় থানার নিচে নেমে আসতে হবে। আমিও যে অবস্থায় ছিলাম সে অবস্থায় শুধু জুতা পরে নিচে নেমে আসি ও কাজ শুরু করি।’