এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্ন নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এর সঙ্গ জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
আলোচিত প্রশ্নপত্রটি কুমিল্লা বোর্ডের জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সেটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের।
সারা দেশে রোববার এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়। ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’ সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।
কী আছে প্রশ্নে
প্রশ্নের উদ্দীপক অংশে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে।
‘আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নের এই অংশটি পোস্ট করে তা কুমিল্লা বোর্ডের বলে দাবি করা হয়। সংবাদমাধ্যমেও তা কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্ন উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কী বলছে কুমিল্লা বোর্ড
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, তা কি গোপন থাকে? শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্নপত্র আছে। যে কেউ চাইলে দেখতে পারেন আসলেই কি এমন প্রশ্ন ছিল কি না। শুধু এটুকুই বলব, যা প্রচার হয়েছে তার সঙ্গে কুমিল্লা বোর্ডের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই।’
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল নাছের বলেন, ‘কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুল। আমি গতকাল (রোববার) অনুষ্ঠিত বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষাসচিব মহোদয়কে পাঠিয়েছি। কারা এমন বিভ্রান্তি ছড়াল, তা আমার বোধগম্য নয়।’
অন্যদিকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রশ্নটি ঢাকা বোর্ডের।
ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় রয়েছে আলোচিত প্রশ্নটি
কীভাবে এমন প্রশ্ন এসেছে, তা নিশ্চিত নন জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন এটি, তবে অন্য বোর্ডের মাধ্যমে এসেছে। কোন বোর্ড বা কারা কারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা আমরা চিহ্নিত করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত করার পর ব্যবস্থা নেব।’
দুঃখজনক ঘটনা বলছেন শিক্ষামন্ত্রী
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সোমবার এক অনুষ্ঠান শেষে এই প্রশ্নপত্র নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন সেটিং আর মডারেটিং করা হয়। যিনি সেট করেন তিনি সেটা দেখতে পারেন না। যিনি মডারেট করেন তিনিও দেখার সুযোগ পান না। আর তাদের বাইরে আর কারও দেখার সুযোগ থাকে না। এটা আমাদের নির্দেশিকায় আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক যে কোনো একজন প্রশ্নকর্তা এই প্রশ্ন করেছেন। যিনি মডারেট করেছেন তার দৃষ্টিও এড়িয়ে গেছে। তিনিও এটিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। আমরা চিহ্নিত করছি এটা কে বা কোন মডারেটর করেছেন। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
‘বাংলাদেশের প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কথা থাকবে, এটা দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে (প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে) এত ব্যবস্থা নিয়েছি, যেখানে প্রশ্ন ছাপা হয় বা মডারেটর দেখেন বা কোশ্চেন সেটেল করেন। এই এক একটা ধাপ। আর এই ধাপের কোনো একটা জায়গায় বিচ্যুতি হলে সেটা কিন্তু ডিটেকটেড হয় পরীক্ষার হলে যখন পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্র হাতে পায়।
‘তার আগে এটি (প্রশ্ন) দেখার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য এই সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে। আমরা দেখছি এটা কীভাবে দূর করা যায়।’