উপচে পড়া যাত্রীবোঝাই ট্রেনের দুটি ছবি এবং একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই পোস্টে দাবি করা হয়, ২২ অক্টোবর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খুলনায় বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
আসলে ছবি ও ভিডিওর দাবিগুলো মিথ্যা। খুলনায় এই বছর বিএনপির একটি বিশাল সমাবেশ হলেও, ছবিগুলো ২০২০ এবং ২০১১ সালের। আর ভিডিওটি চলতি বছরের মে মাসের।
মিথ্যা দাবির পোস্টটি ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর ফেসবুকে শেয়ার হয়। এটির ক্যাপশনে লেখা- ‘শত বাধা এবং হামলা উপেক্ষা করে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি'র নেতা-কর্মীরা ট্রেনযোগে যোগদান!!’
পরিবহন ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে চলতি বছরের অক্টোবরে খুলনায় বিএনপির সরকারবিরোধী সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। সম্প্রতিক মাসগুলোয় বিএনপির ৫ কর্মীকে হত্যা এবং দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্র্যাকডাউনের প্রতিবাদে সেদিন সমাবেশ করেছিল বিএনপি।
একই দাবির ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও পোস্ট হয়। তবে ভিজ্যুয়াল শেয়ার হয়েছে মিথ্যা প্রসঙ্গে।
স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের ছবি
গুগলে একটি বিপরীত চিত্র অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের বার্ষিক ছবি প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইটে প্রথম ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল। বর্ণনায় লেখা- ‘একটি লোকাল ট্রেনে ব্যাপক ভিড়।’
ওয়েবসাইটটি অনুসারে, ছবিটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার রায়হান আহমেদ তুলেছিলেন।
আহমেদ জানান, ভুয়া পোস্টে তার ছবি বারবার শেয়ার হচ্ছে।
‘এই ছবিটি ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সময় তুলেছিলাম।'
নীচে ভুয়া পোস্টে (বামে) ছবির একটি স্ক্রিনশট এবং স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন (ডানে) প্রকাশিত ছবি:
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ছবি
গুগলে একটি বিপরীত চিত্র অনুসন্ধানে দ্বিতীয় ছবিটির খোঁজ পাওয়া গেছে। উপচে পড়া যাত্রী বহন করা ট্রেনের ছবিটি ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ফটোগ্রাফার পাভেল রহমান তুলেছিলেন। এটিও বিশ্ব ইজতেমার সময় তোলা হয়েছিল।
ছবির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা- ‘টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে তিন দিনের ইসলামিক ধর্মসভায় যোগদানের পর লাখ লাখ বাংলাদেশি মুসলমান ভিড়ে ঠাসাঠাসি একটি ট্রেনে চেপেছেন; রোববার, ২৩ জানুয়ারি ২০১১।
নীচে ভুয়া পোস্টে (বামে) ছবির একটি স্ক্রিনশট এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটো (ডানে):
ট্রেনস্পটিং ভিডিও
বিডি ট্রেন এক্সপ্রেস নামে একটি চ্যানেলে ২০২২ সালের ১ মে প্রকাশিত একটি ইউটিউব ক্লিপের ৩১ সেকেন্ডের সঙ্গে মিলে যায় ভিডিওটি। এই চ্যানেলটি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের ট্রেনের ভিডিও পোস্ট করে।
ভিডিওটির বর্ণনায় লেখা: ‘দুই বছরে (মহামারি চলাকালীন) এমন দৃশ্য দেখা যায়নি; কারণ এই ধরনের ট্রেনগুলোতে গণপরিবহন নিষিদ্ধ ছিল।
‘মানুষকে এভাবে বাড়ি ফিরতে দেখেই বোঝা যায় ঈদ চলে এসেছে।’
ঈদ ঘিরে বাংলাদেশিরা নিজ নিজ শহর কিংবা গ্রামে ফিরে যায়। চলতি বছরের ৩ মে দেশে ঈদ উদযাপিত হয়।
নীচে একটি মিথ্যা পোস্ট (বামে) এবং বিডি ট্রেন এক্সপ্রেস ইউটিউব ক্লিপ (ডানদিকে) ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট তুলনা করা হল:
বিডি ট্রেন এক্সপ্রেস ইউটিউব ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ক্লিপটি বালাশপুর ওভারপাস, ময়মনসিংহ’- থেকে ধারণ করা হয়েছে।
ক্লিপটিতে দেখানো অবস্থানটি ঢাকার উত্তরে অবস্থিত একটি শহর যেটি ময়মনসিংহের রেলওয়ে ট্র্যাকের গুগল স্ট্রিট ভিউ চিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।
নীচের তুলনাটি বিডি ট্রেন এক্সপ্রেস (বামে) এবং গুগল স্ট্রিট ভিউ (ডানে) থেকে ময়মনসিংহের ভিডিওটিকে ভূ-অবস্থান করে পোস্ট করা ভিডিওর মধ্যে মিল তুলে ধরে।