সাফ শিরোপাজয়ী নারী দলের ঢাকায় ফেরার পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের কিছু ছবি ও ভিডিও ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ছবি ও ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, জাতীয় দলের অধিনায়ক ও হেড কোচকে পেছনে দাঁড় করিয়ে রেখে চেয়ারে বসে বক্তব্য দিচ্ছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, বাফুফে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে খেলোয়াড়দের বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলেও প্রতিবেদন প্রচার করেছে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।
বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছেন ফুটবল সমর্থক ও সংগঠকরা। তাদের অভিযোগ জাতীয় তারকাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখানো হয়েছে বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাফুফে কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী, এমনকি জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলছেন, পুরো সংবাদ সম্মেলনের খণ্ডিত একটি অংশ প্রচার করে ছড়ানো হয়েছে বিভ্রান্তি।
সাফ বিজয়ীরা বাফুফে কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর থেকে সংবাদ সম্মেলন পুরোটা সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক কাজী নাহিয়ান আরেফীন ও নাজিবুর রহমান নাঈম।
বাফুফের সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও সর্বডানে হেড কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ছবি: নিউজবাংলা
নেপাল থেকে সাফের শিরোপা নিয়ে বুধবার জাতীয় দল যখন বাফুফে ভবনে পৌঁছায় সময় তখন ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ৭টা। এরপর হয় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের শুরুতেই পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ফুটবল সমর্থক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খাওয়া বাফুফের নিরাপত্তা কর্মীরা সাংবাদিকদেরও নির্ধারিত কক্ষে ঢুকতে বাধা দেন।
শেষ পর্যন্ত ৮টা ৪০ মিনিটে সংবাদকর্মীরা প্রবেশ করেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। দীর্ঘ শোভাযাত্রার ক্লান্তিজনিত কারণে এই কক্ষে সাফজয়ী দলের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন অনুপস্থিত। বিশ্রাম নিতে তারা চলে যান ডরমেটরিতে। সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্রে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এবং হেড কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনসহ উপস্থিত ছিলেন দলের তিন-চার জন সদস্য।
শুরুতে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাফজয়ী দলের অধিনায়ক ও কোচ চেয়ারে বসেছিলেন। সেখানে বসেই বক্তব্য দেন দুজন। এরপর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও বাফুফে সভাপতি সাফের ট্রফি তুলে দেন সাবিনার হাতে।
এ সময় টেলিভিশন সাংবাদিকদের অনুরোধে সাবিনা ও রাব্বানী টেবিলের মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলেন। পরে তারা পেছনে সরে একপাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনকার ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।
সাবিনা ও রাব্বানী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার পর অনুষ্ঠানের অতিথি ও কর্মকর্তাও বক্তব্য দেন।
বুধবার রাতের সংবাদ সম্মেলনটি কাভার করেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সাংবাদিক জয়ন্ত সাহা জয়। তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন (বানান ও ভাষারীতি অপরিবর্তিত), ‘বলা হচ্ছে কৃষ্ণা, সাবিনা ও সানজিদা বা মারিয়ারা সেখানে বসার জায়গা পাননি৷ বসতে পারেননি কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনও৷ আদতে ঘটনা ওইরকম নয়৷ সংবাদ সম্মেলনের পোর্ডিয়ামের ঠিক পাশে সোফায় বসে নোট নিয়েছি। আমার ঠিক সামনে বসেছিলেন ছোটন ভাই। কৃষ্ণা, সাবিনা, সিরাত ও মারিয়ারা এসেছিলেন৷ সাবিনা ও ছোটন ভাই বসেছিলেন চেয়ারে। বাকিরা বসতে চায়নি৷‘বাফুফে ভবনের তিন তলায় কনফারেন্স রুমটা খুব ছোট। এসি চলে না৷ মারিয়া এসেই বললো, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাকে দ্রুত চলে যেতে বলি, কৃষ্ণাও চলে যায়৷ ওই ছোট রুমে আজ সব মিডিয়াকর্মীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন৷ সাবিনা ও ছোটন ভাইকে রিকোয়েস্ট করা হলো তারা যেন আসন ছেড়ে মাঝে এসে কথা বলেন। বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসনরা বলেছেন, তাদের সুবিধা হয়। সাবিনা ও ছোটন ভাই তাই দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন।’
অন্যদিকে, বাফুফের দাবি খেলোয়াড়দের প্রতি কোনো ধরনের অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়নি। প্রয়োজন অনুযায়ী এবং সাংবাদিকদের অনুরোধে জায়গা বদল করেছেন খেলোয়াড় ও কোচ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন নারী দলের হেড কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ছবি: সংগৃহীত
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাই ছিলাম। পরিস্থিতি কী ছিল সেটা দেখেন। মন্ত্রী মহোদয় এসেছেন। তারা বসে ছিলেন। সাবিনাও বসা ছিল। সাবিনা সিট ছেড়ে হেড কোচকে জায়গা করে দিয়েছে সেটাও আপনাদের (সাংবাদিকদের) অনুরোধে। আপনারাই বলেছিলেন, হেড কোচ দূরে বসেছেন, তাকে এখানে নিয়ে আসলে ক্যামেরায় পেতে সুবিধা হবে। আপনাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তেমনটাই করা হয়েছে।‘আমরাও বিষয়গুলো বুঝি যে, অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে যায়। তবে আমি অনুরোধ করব আমরা যে একটা দারুণ একটা ফ্লো-র মধ্যে রয়েছি সেটা যেন ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করতে পারি।’
বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
এতে দেখা যাচ্ছে, সাবিনা ও হেড কোচ দুজনে চেয়ারে বসেই বক্তব্য দিচ্ছেন।
সাবিনা লিখেছেন, ‘বিষয়গুলোকে নেতিবাচক হিসেবে নেবেন না। এসব নেতিবাচক বিষয় সামনে এনে আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনটিকে নষ্ট করবেন না। সবাই ইতিবাচক হওয়ার চেষ্টা করি ও উপভোগ করি। আমার এটুকুই বলার ছিল। সবার প্রতি ভালোবাসা।’