কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। ওই অভিযোগে করা মামলার আসামি ইসরাত জাহান পাখিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
খালাস পাওয়ার বিষয়ে পাখি নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিডিয়ায় একের পর এক মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। অথচ মামলার রায় নিয়ে কোনো প্রতিবেদন না হওয়াটা দুঃখজনক।’
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল আকন ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর মামলা করেন। জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ওই মামলা করা হয়।
মামলায় বলা হয়, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের আবাসিক হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করার সুবাদে পাখি দীর্ঘদিন ধরে তাকে ফেসবুকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। রাজি না হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সাত-আটজন অপরিচিত লোক নাজমুলকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে একটি নীল কাগজে তাকে সই করতে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে শহরে ছেড়ে দেয়া হয় বলেও উল্লেখ করা হয় মামলায়। সে সময় কোনো না কোনোভাবে এ ঘটনা কেউ ভিডিও করে রাখে। সেই ভিডিও ক্লিপ আদালতে উপস্থাপনও করা হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, নাজমুল ও পাখি পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসা। পেছনে দাঁড়ানো এক লোক নাজমুলের ঘাড়ের দুই পাশ ধরে আছে। অন্য পাশ থেকে এক ব্যক্তি পাখি ও নাজমুলের মুখে মিষ্টি জাতীয় কিছু তুলে দিচ্ছেন। সেখানে নাজমুলকে চুপচাপ দেখা গেলেও পাখি সরব ছিলেন।
তবে পাখি শুরু থেকে বলে আসছিলেন যে পুরো ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো। তার দাবি ছিল যে নাজমুল তার স্বামী।
মামলা হওয়ার ১০ দিন পর ১৩ অক্টোবর একই আদালতে নাজমুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন পাখি। সেই মামলায় ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নাজমুলের সঙ্গে পাখির বিয়ের কাবিনসহ প্রেমঘটিত একাধিক প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়।
পুলিশ চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর গত মার্চ মাসে পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক আশিকুর রহমান নাজমুলের করা মামলাটি খারিজ করে দেন। এর আগে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য নাজমুলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
পাশাপাশি পাখির করা মামলায় তাদের কাবিনের সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকাও পাখিকে দেন নাজমুল।
পাখি নিউজবাংলাকে বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে মির্জাগঞ্জ উপজেলার একটি ছাত্র সংগঠনের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নাজমুলের সঙ্গে তার পরিচয়। একই এলাকার বাসিন্দা ও ব্যাচমেট হওয়ার কারণে প্রস্তাব গ্রহণ করেন তিনি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় চাকরির জন্য আসেন নাজমুল। পাখি তখন ঢাকার সংসদ ভবন এলাকার এসিপিআর নামের একটি রিসার্চ সংগঠনে কর্মরত ছিলেন। তখন নাজমুল আর পাখি স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একই অফিসে চাকরি নেন। একপর্যায়ে নাজমুল সিভি জমা দিলে সেখানে অবিবাহিত লেখা থাকলে কর্মকর্তাদের বলেন যে ‘আমরা সবেমাত্র বিয়ে করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকতা হবে।’
এ ঘটনার পর সাত দিন নাজমুল পাখির সঙ্গে একত্রে বসবাস করেন।
পাখি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সম্পর্কের আগে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আমার সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যেই আরও একটি মেয়ের সঙ্গে নাজমুল নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এসব বিষয় যখন প্রমাণ নিয়ে আমি তার কাছে হাজির হই, তখন সে সব অস্বীকার করে ফোন বন্ধ করে রাখে।
'এর মধ্যে আমরা ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কাবিনের কাজ শেষ করি। কাবিননামায় নাজমুল নিজে উপস্থিত থেকে আমার সঙ্গে সই করেছে। অথচ ওই ২৭ তারিখের ঘটনা উল্লেখ করে পটুয়াখালী আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে আমার জীবনটাকে সামাজিকভাবে বরবাদ করে দিয়েছে।'
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ২৭ সেপ্টেম্বর নাজমুল আর আমি যে ঢাকায় অবস্থান করেছি, সেটি মোবাইল ট্রাকিংয়ে স্পষ্ট পেয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এসব কাগজপত্র বিচারক দেখে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।’
নাজমুলের বক্তব্য
ঘটনাটি অনেক পুরোনো, সবাই ভুলে গেছে, তাই এটি নিয়ে নাড়াচাড়া না করার অনুরোধ করেছেন নাজমুল। তিনি বলেন, ‘আমার মামলা আমি তুলে নিয়েছি। এটার সমাধান হয়ে গেছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মামলাটি দীর্ঘ না করে তুলে নিয়েছি। এটি শেষ। সবাই ভুলে গেছে। আমরাও ভুলে গেছি। নতুন করে এটি নিয়ে আপনারা আর কোনো নিউজ কইরেন না।’
আপনি তো একটি মেয়ের বদনাম করলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভাই অনেক সময় অনেক কিছু দেখে বোঝা যায় না। আবার সব কিছু বোঝানোও যায় না। আমাদের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। তাই বলছি, এটি নিয়ে আপনারা আর নাড়াচাড়া কইরেন না। তার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। সব শেষ।’
নাজমুলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘কিছুদিন মামলাটি চালানোর পর বাদীপক্ষ আর কনটেস্ট করতে চায়নি। যে কারণে মামলাটি আমি ছেড়ে দিয়েছি।’