থাই ভাষার একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। কয়েক হাজার বার শেয়ার হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়, মাথার আকৃতি দেখে বিষধর সাপ চিহ্নিত করা যায়।
কোবরা এবং পিট ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপের আবাসস্থল থাইল্যান্ড। সাপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোস্টগুলো সঠিক নয়। এভাবে সব ধরনের সাপ শনাক্ত করা যায় না। কারণ দুই ধরনের সাপের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। একটিকে অন্যটির থেকে আলাদা করার জন্য আকৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।
৫ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট হওয়ার পর সেটি শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৩০০ বারের বেশি। থাই ভাষার পোস্টটির ক্যাপশন ‘বিষধর সাপকে কীভাবে আলাদা করা যায়।’ সঙ্গে ছিল দুটি সাপের ইনফোগ্রাফিক।
বাম দিকের ছবিটিতে একটি সাপের মাথা দেখায়; যার ওপরে একটি ত্রিভুজ রয়েছে। ওপরে লাল থাই-ভাষায় লেখা ‘বিষধর’। ডানদিকের ছবিতে আরেকটি সাপের মাথা দেখা যাচ্ছে; যার ওপরে একটি ডিম্বাকৃতি রয়েছে। সবুজ থাই-ভাষায় লেখা ‘বিষধর নয়’।
কোবরা এবং পিট ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপের আবাসস্থল থাইল্যান্ড। সাপ এখন রাজধানী ব্যাংককের বাসিন্দাদের জন্য ক্রমেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বর্ষাকালে প্রায়ই তারা মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
থাই কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরীসৃপদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ পেতে অনিচ্ছুক। কারণ এরা ইঁদুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অন্যথায় ফসল এবং খাদ্যের মজুত হুমকিতে পড়বে।
টুইটারেও এই পোস্টটি শেয়ার হয়েছে দেদার। ছড়িয়ে পড়েছে রুশ ভাষার একটি ব্লগ পোস্টেও।
তবে এ দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছেন সাপ বিশেষজ্ঞরা। থাই রেডক্রসের অধীনে পরিচালিত একটি বিষধর সাপ পালন কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ তাকসা ভাসারুচাপং।
তিনি বলেন, ‘অ-বিষধর সাপ থেকে বিষধরকে আলাদা করার জন্য পোস্টে দেয়া পরামর্শ সঠিক নয়। সাপের মাথা দেখে বিষ থাকার বিষয়টি নির্ণয় করা যায় না।’
থাইল্যান্ডে ২০০-এর বেশি প্রজাতির সাপ রয়েছ। এদের বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ভর করে অঞ্চলের ওপর। তাকসা বলেন, ‘অনেক অ-বিষধর সাপেরই বিষধর সাপের মতো বৈশিষ্ট্য আছে।
‘কোবরা হলো গোলাকার আকৃতির মাথাওয়ালা বিষধর সাপের উদাহরণ, সাধারণত যেগুলোর দেখা মেলে গোটা থাইল্যান্ডেই। এদের বিষ মারাত্মক। সঠিক চিকিৎসা না পেলে মাত্র একটি কামড় হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক।’
ব্যাংকক স্নেক মিউজিয়াম সিয়াম সার্পেন্টারিয়ামের সিনিয়র ম্যানেজার এবং অপারেশন প্রধান স্যারনন্ট চারোয়েনসুকও তাকসার সঙ্গে একমত।
তিনি বলেন, ‘সাপ বিষধর কি না তা নির্ধারণে পোস্টের দাবি ঠিক না। থাইল্যান্ডে অনেক প্রজাতির সাপ রয়েছে যেগুলো এই শ্রেণি বিভাগের সঙ্গে যায় না। এগুলোর বেশির ভাগই মারাত্মক। মাথার আকৃতি দেখে বিষধর সাপকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।’
স্যারনন্টের পরামর্শ, নির্দিষ্ট সাপের বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা। তাই বৈশিষ্ট্যগুলোতে নজর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সুমাত্রান গ্রিন পিট ভাইপারকে এর লাল লেজের জন্য শনাক্ত করা যায়; যেখানে কোবরাদের বড় ফণা দেখা যায়।
স্যারনন্ট বলেন, ‘সব সাপই মাংসাশী। তারা শিকার করে। প্রয়োজনে চেহারায়ও পরিবর্তন আনতে পারে।’