সিলেট, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার করছেন নেটিজেনরা। বানভাসীদের তীব্র দুর্ভোগ ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশবাসীকে। তবে যাচাই না করে কিছু ক্ষেত্রে ভুল ছবি শেয়ারের অভিযোগও উঠছে।
অভিনয়শিল্পী জয়া আহসানও এমন ভুল এড়াতে পারেননি। বানভাসীদের অসহায়ত্ব নিয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ফেসবুকে তিনটি পোস্ট করেছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি পোস্টে বেশ কিছু ছবি যুক্ত করেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে রোববার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে শেয়ার করা একটি পোস্টে সাতটি ছবি দিয়েছেন জয়া। তবে এর মধ্যে একটি ছবি সিলেট, সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যার নয়। এমনকি সেটি নিকট অতীত বা বাংলাদেশ অঞ্চলেরও নয়।
জয়ার পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায় পানিতে প্রায় ডুবে যাওয়া একটি শিশু মাথায় একটি গামলা ধরে কোনোমতে একটি কুকুরছানাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জয়ার পাশাপাশি আরও অনেকেই শেয়ার করছেন ছবিটি।
গুগল লেন্সের সাহায্যে ছবিটির উৎস অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় ছবিটি বেশ কয়েক বছর আগে গ্লোবালগিভিং নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
গ্লোবালগিভিং নামের একটি উন্নয়ন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ছবিটি
এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘গ্লোবালগিভিং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যেটি অন্যান্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দাতাগোষ্ঠী এবং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। আমরা ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত (এবং এর মধ্যে শত শত জায়গায়) বিশ্বস্ত, কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সহায়তা করছি। আমাদের এই পৃথিবীকে আরও উন্নত জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে ওই সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অংশীদার করতে সাহায্য করছি।’
গ্লোবালগিভিং তাদের ওয়েবসাইটে ‘রেসকিউ ডগস ইন ফ্লাড এরিয়াস- সেভ চিলড্রেন্স লাইভস’ শিরোনামে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে বানের পানির মধ্য দিয়ে চলা শিশুটির ছবি প্রকাশ করে। এই শিরোনামে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানির মাঝে অসহায় ককুরদের উদ্ধারের মোট ছয়টি ছবি রয়েছে।
কুকরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে চলা শিশুটির ছবিটি কোথায় তোলা- সেটি আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে সার্স ইঞ্জিন ইয়াহুর আলোকচিত্রের ব্লগ ‘ফ্লিকার’-এর একটি ছবি পাওয়া গেছে। ফ্লিকারে এই ছবিটি আপলোড করা হয় ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর। এর বিবরণে লেখা হয়েছে ভিয়েতনামের বাক লিউ রাজ্যের পরিবেশগত পরিস্থিতি।
ফ্লিকারে ছবিটি আপলোড হয় ২০০৯ সালে
ফ্লিকারের ছবির বিবরণ সঠিক হলে এটি তোলা হয়েছিল এক যুগেরও বেশি আগে ভিয়েতনামে। ওই শিশুটির একই ধরনের আরেকটি ছবিরও সন্ধান পেয়েছে নিউজবাংলা।
ভিএন এক্সপ্রেস নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ভিয়েতনামি সংস্করণে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কুকুর খাওয়ার বিরুদ্ধে হ্যানয় ডিক্রির প্রতি পশুপ্রেমী সংগঠনগুলো সমর্থন জানানোর খবর দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।
ভিএন এক্সপ্রেসের ভিয়েতনামি সংস্করণে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন
ভিএন এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের ফাইল ছবিতে কুকুরছানা মাথায় নিয়ে পানি ঠেলে যাওয়া ওই শিশুটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ছবিটি খানিকটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি তোলেন নগুয়েন থান লি নামের একজন এবং এটি ভিএন এক্সপ্রেস আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময়ে সেই অঞ্চলের পরিস্থিতি দাবি করে শিশুটির ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ভারতের হায়দরাবাদে গত বছরের আগস্টে বন্যার সময়ও ছবিটি ছাড়ানো হয়েছিল।