ফরিদপুরের সালথায় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে চাচিকে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন মাঝারদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আলম মিয়া।
এই নুরুলের বিরুদ্ধেই চাচিকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ করেছিলেন মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ। আফসারের বরাতে নিউজবাংলাসহ প্রথম সারির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার হয়।
তবে নুরুলের দাবি, তার দলীয় প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার আবু বক্করের পরিকল্পনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বক্কর ভোটে হেরে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এমন মিথ্যা তথ্য চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের দিয়েছেন।
বক্কর তার চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী লাবনী আক্তারের মধ্যে কোন্দলের সুযোগে নুরুলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।
জাহিদুল বুধবার বিকেলে সালথা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে বলা হয়, লাবনী মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। ফিরতে দেরি হলে জাহিদুল বের হয়ে দেখেন লাবনী টয়লেটে নেই। পরিবারের সবাই মিলে বাড়ির আশপাশে অনেক খুঁজেও তাকে পায়নি।
এ ঘটনার পর মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, লাবনী সম্পর্কে নুরুল আলমের চাচি হন। লাবনীদের বাড়িতে যাওয়া-আসা রয়েছে নুরুলের। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মঙ্গলবার রাতে তারা পালিয়ে যান।
চেয়ারম্যানের বরাতে সংবাদটি প্রকাশের পর নুরুল পরে নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। বুধবার বিকেলে থানায় জিডির পর স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। সমাজে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি প্রকাশ করা হয়।
‘ঘটনার দিন আমি আমার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলাম। এরপর বিভিন্ন লোকজন ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানান। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।’
নুরুল আরও বলেন, ‘যতদূর জানি, ওই নারী ও তার স্বামীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে কলহ চলছিল। তার স্বামী বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। এ কারণেই তাদের মধ্যে কলহ হয়। পরে জানতে পারলাম তার স্ত্রী ঝগড়া করে এক আত্মীয়ের বাড়ি গেছেন।
‘স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে জাহিদুল সালথা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সেখানে আমার নাম নেই। তবুও আবু বক্কর আমার নামে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এমন ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। সমাজে আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আইনের আশ্রয় নেব।’
স্বামীর সাধারণ ডায়েরির পর বুধবার রাতে লাবনী তার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
ভিডিওতে তিনি জানান, জাহিদুলের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জানতে পারেন তার স্বামীর বিয়েবহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক আছে। এর প্রতিবাদ করলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। বাড়ি থেকে বেরও করে দেন।
লাবনী বলেন, ‘আমি একাধিকবার আমার বাবার বাড়ি চলে যাই। সালিশ ডেকে তারা আমাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। গত ৭ জুন সন্ধ্যায় আমার স্বামী বাড়ি ফিরে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে গালিগালাজ করেন এবং মিথ্যা প্রেমের অপবাদ রটান।
‘কারও সঙ্গেই আমার প্রেমের সম্পর্ক নেই। তাই আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আরও বকাবকি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরপর আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিই। আত্মহত্যা করতে না পেরে এক আত্মীয়র বাড়িতে চলে এসেছি।’
লাবনী আরও বলেন, ‘আমি চলে আসার পর আমার স্বামী ও তার পরিচিত লোকজন মিলে মেম্বার নুরুল আলমকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দেন। নুরুল আলমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি নিজের মতো বাঁচতে পালিয়ে এসেছি।’
নিউজবাংলাকে লাবনী বলেন, ‘ঘটনা যখন এতদূর গড়িয়েছে তাই আমি দুই-এক দিনের মধ্যে নির্যাতনের বিষয়ে জাহিদুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।’
তবে জাহিদুলের দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে নুরুল আলমের প্রেমের সম্পর্ক আছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী লাবনীর সঙ্গে মেম্বার নুরুল আলমের সম্পর্ক আছে। এ বিষয়টা আমি হাতেনাতে ধরে ফেলি। দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে লাবনীকে একাধিকবার বুঝিয়েছি।
‘আর আমার স্ত্রী মিথ্যা কথা বলছে। কারও সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিষয় নিয়ে সব পরিবারেই টুকটাক অশান্তি থাকে। আমি তাকে কখনও নির্যাতন করিনি। আমাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে।’
নুরুলের তোলা পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আলম সম্পর্কে আমার ভাতিজা, সে আমার কাছের লোক ছিল। গত নির্বাচনে সে আমার প্রতিপক্ষ হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হয়নি।
‘স্থানীয়দের কাছ থেকে আমি তাদের প্রেমের কথা শুনেছিলাম। তাই সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে সেটাই বলেছি।’
অন্যদিকে বক্করের কাছ থেকেই বিষয়টি শুনে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আলম ও লাবনী আক্তারের ঘটনার সত্যতা জানতে আমি নুরুল আলমকে কল দিয়েছিলাম। সে কল রিসিভ না করলে বক্করের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার কাছ থেকেই জানি, নুর আলম ও লাবনী ভেগে গেছে।
‘পরে নুরুল আলম আমাকে ফোন করে বলে সে এ রকম কিছু করেনি। কিছু লোক জাহিদের স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি এভাবে প্রচার করেছে। এর পেছনে তার স্বামীর হাতও থাকতে পারে। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। লাবনী কয়েকবার বাবার বাড়ি চলে যাওয়ায় সালিশে মিটমাটও করা হয়েছে।’
সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনও ওই নারীর নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে মেম্বারের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। ওই নারী তার এক আত্মীয়র বাড়িতে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঘটনা সত্যি কি না তা খোঁজ নিচ্ছি।’
[মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদের বরাতে ‘চাচির সঙ্গে উধাও ইউপি মেম্বার’ শিরোনামে ৮ জুন একটি প্রতিবেদন নিউজবাংলায় প্রকাশিত হয়। আরও বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে এর সত্যতা না পাওয়ায় নিউজবাংলা দুঃখপ্রকাশ এবং আগের প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করছে।]