বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার হাতে পদ্মা সেতুর ভিত ২১ বছর আগে

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ১৩:০৬

নিউজবাংলার হাতে এসেছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম সেতু।

ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ জুন সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সেতুর অর্থায়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, এই সেতু নির্মাণ আর সম্ভব হবে কি না; তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় দৃঢ়তার কারণেই সেই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে।

২০১২ সালের ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এর চার দিন পর ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দৃঢ়তা প্রকাশ করেন তিনি।

এর প্রায় এক দশক পর বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনা যখন শুরু হয়েছে, তখন নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে মাঠের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে গত রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু কারও পৈতৃক ব্যাপার না, এটা রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় করা। পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর প্রথম স্থাপন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এক দিকে নয়, দুই দিকে, মাওয়াতে এবং ওই পারে। সে কথা তো কেউ বলে না, উচ্চারণও করে না। যমুনা সেতু যখন তৈরি করা হয়, ঠিক তখনও একই অবস্থা করা হয়েছে।’

এই বক্তব্যের বিপরীতে সরব হয়েছে আওয়ামী লীগও। ঠিক পরদিন সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে ফখরুল সাহেবের এ বক্তব্য বছরের সেরা আবিষ্কার। মিথ্যাচার বিএনপির ধর্ম, এটা সবাই জানে, তবে দিনেদুপুরে নির্জলা মিথ্যাচারের একটি নতুন রেকর্ড।’

মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যকে মিথ্যাচার বলে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের আরও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।

বিষয়টি নিয়ে যখন সরগরম রাজনীতি, চলছে বাদানুবাদ, তখন নিউজবাংলার হাতে এসেছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার প্রথম মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপন করেন তিনি।

পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১১ দিন পর, অর্থাৎ ওই বছরের ১৫ জুলাই শেষ হয় তার সরকারের মেয়াদ। পরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।

২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

২০০১ সালের ৪ জুলাই (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৪০৮ বঙ্গাব্দের ২০ আষাঢ়) প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে। ভিত স্থাপন শেষে মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করে, সেখানেও ছাপা হয়েছে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাণী, যার একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।

বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে রাজধানীসহ দেশের সকল অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক সংযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

‘আমাদের সরকার স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। পাকশী সেতু, ভৈরব সেতু, রূপসা সেতুর নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে পদ্মা নদীর ওপর বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদের সরকার দৃঢ়সংকল্প। আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এ সেতু নির্মিত হলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারা দেশে মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়তর হবে।

‘বিগত পাঁচ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধনের ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে গতি সঞ্চারিত হয়েছে, তা আরও বেগবান হবে। এ সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলার গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। এ সেতু দেশের সুষম বিদ্যুৎ বিতরণ ও গ্যাস সঞ্চালনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। সেতুর ওপর দিয়ে রেলসংযোগ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনে দিতে পারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।’

যোগাযোগব্যবস্থাসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে প্রকৃত ‘সোনার বাংলা’ রূপে গড়ে তোলার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আবারও শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণে তোড়জোর।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সেতুর মূল নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়।

২০১০ সালের ১১ এপ্রিল সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিক এক বছর পর ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল সেতুতে রেলপথ যুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তার ১৭ দিন পর অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল সেতু নির্মাণে অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে সই করে সরকার।

২০১১ সালের ২৪ মে সই হয় আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয় ওই বছরের ৬ জুন।

২০১২ সালের জুনে এসে পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। ওই বছরের ২৯ জুন দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে এগিয়ে আসা দাতা সংস্থাগুলো বাতিল করে ঋণচুক্তি।

অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ। ঠিক পাঁচ দিন পর ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। শুরুতে সেই কথা অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি। ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

২০১৪ সালের ৭ জুলাই শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটির নির্মাণকাজ। তিন বছরের বেশি সময় পর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবশেষ স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মার বুকে রচিত হয় বাংলাদেশের গৌরবগাথা।

তারপর রোড স্ল্যাব, রেল স্ল্যাব, লাইটিং, কার্পেটিং, ঘষামাজা সব শেষ করে উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে স্বপ্নের এই সেতু।

২৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের দিন সেতু দিয়ে কোনো যান চলাচল না করলেও হেঁটে সেতু পারাপারের সুযোগ দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর পরদিন সেতুটি খুলে দেয়া হবে যান চলাচলের জন্য।

এ বিভাগের আরো খবর