দাবি করা হয়ে থাকে ওজন কমাতে সহায়তা করে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি অনেক পুষ্টিবিদও এ দাবির পক্ষে। তবে গবেষণা বলছে, এটি ভ্রান্ত ধারণা। শুধু তা-ই নয়, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল ফেসবুকে ছড়ানো একটি পোস্ট বেশ আলোচিত হয়। দুই দিনে পোস্টটি শেয়ার হয় ৬০০ বারের বেশি। যেখানে বলা হয়, বেকিং সোডা, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এবং লেবুর রস ওজন কমাতে কার্যকর।
এ ছাড়া গত বছর ফেসবুকে ছড়ানো একটি ভিডিও ২৫ লাখবার দেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ওজন কমানোর জন্য অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ড্রিংক রেসিপি দারুণ কাজের।
ওই ভিডিওর সঙ্গে একটি বার্তাও প্রচার হয় তখন। সেখানে বলা হয়, “অ্যাপল সাইডার ভিনেগার প্রায়ই অমোঘ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে।”
এটি শেয়ার হয়েছিল ৪০ হাজারের বেশিবার।
তবে ওজন কমাতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বেশ দুর্বল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ওজন কমানোর জন্য অ্যাপল সাইডার ভিনেগার যে কার্যকর, তার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
ওজন কমানোর প্রমাণ খুবই কম
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারকে ওজন কমানোর হাতিয়ার ঘোষণা করার পক্ষে যথেষ্ট গবেষণা নেই।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারল এস জনস্টন বলেন, ‘প্রমাণটি স্পষ্ট নয়। মানুষের ওজন কমানোর সঙ্গে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকায় খুব একটা উপকারিতা নেই।
‘অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের প্রধান সক্রিয় উপাদান অ্যাসিটিক অ্যাসিড। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্থূল ইঁদুর ফ্যাট অক্সিডেশন এবং মেটাবলিক অ্যাবনরমালিটিসে (বিপাকীয় অস্বাভাবিকতা) পরিবর্তন আনতে পারে।
‘আপনি যদি ফ্যাট অক্সিডেশন বাড়াতে পারেন, তবে এটি চর্বি হ্রাসে সহায়তা করবে। সম্ভবত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়াতে বা কমাতে অবদান রাখতে পারে ভিনেগার।’
অক্সফোর্ডের বায়োসায়েন্সের গবেষকরা ইঁদুরের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছেন, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি এথেরোজেনিকের ঝুঁকিতে থাকা স্থূলতায় ভোগাদের ক্ষেত্রেও কার্যকর। ২০১৯ সালে এটি প্রকাশ হয়।
তবে মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। এ নিয়ে গবেষণাও হয়েছে হাতে গোনা। কিছু গবেষণা তো রয়ে গেছে অমীমাংসিত।
মানুষের ওজন কমাতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের ভূমিকা নিয়ে আলোচিত গবেষণাটি হয়েছিল ২০০৯ সালে। এতে অংশ নেন ১৭৫ জন অতিরিক্ত ওজনের জাপানিজ নাগরিক। তাদের একটি অংশকে প্রতিদিন এক বা দুই টেবিল চামচ ভিনেগার দেয়া হয়েছিল। বাকিদের দেয়া হতো না। ১২ সপ্তাহ পর দেখা যায়, যারা ভিনেগার নিয়েছিলেন তাদের ওজন ২-৪ পাউন্ড কমেছিল।
জনস্টন বলেন, ‘গবেষণায় যথেষ্ট ওজন কমতে দেখা যায়নি। কারণ মানুষের ওজন স্বাভাবিকভাবেই ওঠানামা করে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কসরত হচ্ছে ওজন বৃদ্ধির প্রাথমিক চালক। ২০১৮ সালে ছোট পরিসরে চালানো একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ১২ সপ্তাহ ধরে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করছিলেন, তাদের ওজন ৩-৪ পাউন্ড পর্যন্ত কমেছিল।
ভিনেগারের ঝুঁকিও আছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ভিনেগার সেবনে কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। ফুড সায়েন্স জার্নালে ভিনেগার নিয়ে ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের উচ্চ অম্লতা দাঁতের ক্ষয় এবং গলায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
হিউস্টনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের ডেল সেন্টার ফর হেলদি লিভিংয়ের পুষ্টি প্রকল্পের পরিচালক ওয়েসলি ম্যাকওয়ার্টার বলেন, ‘অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার আপনার খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে পারে। তবে এটি থেকে ওজন কমানোর আশা করবেন না।’