বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পত্রিকার ভুল তথ্যে বিদ্রুপে বিপর্যস্ত ২ নিহতের পরিবার

  •    
  • ৬ জুন, ২০২২ ২০:৩৯

নিহতদের বোন ইশরাত জাহান ইতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমার দুই ভাইয়ের মৃ্ত্যুর সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট। সে সময়ে তো খেলার জয় নির্ধারণই হয়নি, তাহলে কীভাবে একটি প্রথম সারির দৈনিক এমন মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে!’

আর্জেন্টিনার জয়ের আনন্দ উদযাপনে বাসার বাইরে খাবার খেতে বেরিয়ে দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর প্রচার করেছে শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম। এই খবর ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

আর সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। এতে নিহতদের পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। তারা বলছেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্যের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মূল ধারার সংবাদপত্রটি। দুই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় যখন মারা যান, তখন আর্জেন্টিনা-ইতালির ম্যাচটির মধ্যবিরতি চলছিল। ফলে ম্যাচে জয় উদযাপনের কোনো সুযোগ তখন ছিল না।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের নিমতলা মন্ত্রী মার্কেটে রহমানিয়া হোটেল সামনে গত বুধবার গভীর রাতে একটি ট্রাক দুই ভাইয়ের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ২৬ বছরের নাহিদ হাসান সবুজ ও ১৭ বছরের তাজিন আহম্মেদ মারা যায়। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই।

এরপর প্রথম সারির একটি দৈনিকে ‘আর্জেন্টিনার ম্যাচ জয়ের আনন্দে বেরিয়েছিলেন দুই ভাই, প্রাণ গেল সড়কে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলামের বরাতে বলা হয়, রাত আড়াইটায় পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে চালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তবে এ-সংক্রান্ত মামলার এজাহারে দুর্ঘটনাটি রাত ১টা ৪০ মিনিটে ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এ ছাড়া ওই রাতে আর্জেন্টিনা-ইতালির ম্যাচটি শেষ হয় রাত পৌনে ৩টার দিকে। ফলে রাত আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে থাকলেও সেটি আর্জেন্টিনার বিজয় উদযাপনের সময়ের বলে প্রচার করার সুযোগ নেই বলে দাবি করছে পরিবার।

নাহিদ ও তাজিনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার এজাহার

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকটি।

তিনি সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে রাত ১টা ৪০ মিনিটে। পুলিশ ঘটনা ঘটার ১০ মিনিট পর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছায়। পত্রিকায় রাত আড়াইটার যে কথা বলা হয়েছে সেটা ভুল।’

নিহত দুজনের স্বজনরা বলছেন, দুই ভাই আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিলেন। সে রাতে তারা বাসায় খেলাও দেখেছেন। তবে বিজয় উদযাপনে বের হয়ে মৃত্যুর তথ্য সঠিক নয়। খেলার মধ্যভাগে খাবার কিনতে হোটেলে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাতীয় দৈনিকটিতে নিহতের ফুফাতো ভাই হিসেবে ‘কামরুজ্জামান’ নামে একজনের বক্তব্য প্রকাশ করা হলেও পরিবারের দাবি এ নামে তাদের কোনো আত্মীয় নেই।

নাহিদ হাসান সবুজের বড় বোন ইশরাত জাহান ইতি নিউজবাংলার কাছে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এই প্রতিবেদন তাদের ও নিহত দুজনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রূপের মুখে ফেলেছে।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমার দুই ভাইয়ের মৃ্ত্যুর সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট। সে সময়ে তো খেলার জয় নির্ধারণই হয়নি, তাহলে কীভাবে একটি প্রথম সারির দৈনিক এমন মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে!

‘এ রিপোর্ট করার সময় আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে তারা কথা বলেনি। নিহতের ফুফাতো ভাই পরিচয়ে যার সঙ্গে তারা কথা বলছে তাকে আমরা চিনি না।’

ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদনের কারণে পুরো পরিবার আরও বেশি মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছে বলেও জানান ইতি। তিনি বলেন, ‘এই সংবাদ পরিবেশনের কারণে ফেসবুকে আমার ভাইদের মৃত্যু নিয়ে কোনো কোনো মানুষ উল্লাস করছে। কেউ আবার বিরূপ মন্তব্য করছে। কেউ এমনও বলছে, এ ধরনের মানুষের মৃত্যু হওয়া ভালো।

‘অনেক মানুষ কমেন্ট করছে- এ ধরনের ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিলে এ রকমই হবে।‘

ইতি জানান, ফেসবুকে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকটির শেয়ার করা প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৭ হাজার মানুষ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় হাজারের বেশি ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট। মন্তব্য করেছেন সাত হাজারের বেশি মানুষ। এসব মন্তব্যের বেশির ভাগই বিদ্রূপাত্মক বলে জানান ইতি।

সবুজের আরেক বোন রোবাইয়া খানম সাথী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওরা বলছে রাত আড়াইটার সময় মারা গেছে। সেদিন খেলা শুরু হইছে ১২টা ৪৫ মিনিটে। ওরা বাসা থেকে বের হইছে ১টা ৩০ মিনিটে। তাহলে ওরা কীভাবে বিজয়োল্লাস করতে বের হলো! মানুষ এই নিউজ পড়ে আমার বাবাকে, পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। এর বিচার কে করবে?’

নাহিদ হাসানের মা নুরন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন বাসায় আমার ভাইয়ের ছেলে ছিল। বোনের ছেলে ছিল। তাজিনের বন্ধু সুজন আসছিল। যার ফলে রাতে ভাত ছিল না। তরকারি বেশি ভালো না হইলে ওরা বাইরে খেতে যায়। সে রাতে খেলার মাঝখানেও খাবার খেতে গিয়েছিল।’

ফেসবুকে বাজে মন্তব্যে ভেঙে পড়েছেন নুরন নাহার। ছেলে হারানোর তীব্র শোকের পাশাপাশি এমন অবস্থাও সামলাতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বুক শূন্য করে সে (নাহিদ) চলে গেল। আমাদের কী ব্যথা, যন্ত্রণা নিয়ে যে চলতে হচ্ছে। তার মধ্যে কেন এত ধরনের মানুষ এমন কমেন্ট করছে!’

নিহত দুই ভাইয়ের একজনের নামের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাটি ভুল করেছে জানিয়ে পরিবার বলছে, তারা ‘তাজিন’-এর পরিবর্তে লিখেছে ‘তাজিম’।

এ বিভাগের আরো খবর