২০২২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে দুজনকে মনোনীত করা হয়েছে মর্মে কিছু পোস্ট সম্প্রতি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব পোস্টে শাহরিয়ার কবির ও রবীন্দ্র ঘোষ নামে দুজনকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।
এ পোস্টগুলোর উৎস রবীন্দ্র ঘোষ নিজেই। তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন এ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খবরে তাকে সংবর্ধনাও দিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি সংগঠন।
এ তথ্যের সত্যতা জানতে অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
রবীন্দ্র ঘোষ পেশায় আইনজীবী। চট্টগ্রাম রাউজানের ঊনসত্তর পাড়ায় তার বাড়ি। ‘বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ’ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তিনি। সংগঠনটি সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করে থাকে বলে তাদের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে।
অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া পোস্টে দাবি করছেন, সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার স্বীকৃত হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য শাহরিয়ার কবির ও তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আমেরিকায় বসবাসকারী ড. সব্যসাচী দস্তিদার ঘোষ নামে এক বাংলাদেশি নাগরিক তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। সব্যসাচী দস্তিদার দীর্ঘদিন আমেরিকায় অধ্যাপনা করছেন বলে জানান রবীন্দ্র ঘোষ।
নাম প্রস্তাবনার বিষয়ে কোনো চিঠি বা ই-মেইল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ নিউজবাংলাকে জানান, এমন কিছু তিনি পাননি। তবে সব্যসাচী দস্তিদার নামের ওই ব্যক্তি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার নিউজ ক্লিপিং পাঠিয়েছেন তাকে, যার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার নাম ‘প্রস্তাব’ করা হয়েছে। ওই পত্রিকায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংখ্যার শেষ পাতায় ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য শাহরিয়ার কবির ও রবীন্দ্র ঘোষের নাম প্রস্তাব’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। মূলত এটি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছিল।
পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সব্যসাচী দস্তিদার ই-মেইলের মাধ্যমে পত্রিকায় ছাপা হওয়া ওই প্রতিবেদনটি রবীন্দ্র ঘোষকে পাঠান। আর সেটি প্রচার করে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে দাবি করতে থাকেন সত্তরোর্ধ্ব রবীন্দ্র ঘোষ।
এদিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হিসেবে রবীন্দ্র ঘোষের দাবির সত্যতা জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে নোবেল পিস প্রাইস কমিটিকে গত ১০ এপ্রিল ই-মেইল করা হয়। এটির এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে নোবেল কমিটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাবকারী ও মনোনীতদের নামের তালিকা কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় না।
প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কমিটি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে আসছে। তবে মনোনোয়নের কাজে সহায়তা করা নরওয়েজিয়ান আইনপ্রণেতারা কিছু কিছু নাম প্রকাশ করে থাকেন। চলতি বছরের শুরুতে প্রাথমিক বাছাইয়ে এমন কিছু নাম প্রকাশ পায়। যদিও সেখানে বাংলাদেশ থেকে কারও নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়টি জানতে চাইলে রবীন্দ্র ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন নিয়মরীতির বিষয়টি আমার জানা নেই। ড. সব্যসাচী আমাদের দুজনের নাম প্রস্তাব করছেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। মানবাধিকার ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় তিনি আমাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের।’
গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে তাকে দেয়া সংবর্ধনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাইনরিটি ওয়াচ চট্টগ্রামের কমিটি আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। আরও অনেকেই সংবর্ধনা জানাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারিতে নাম প্রস্তাবের বিষয়টি জানতে পারলেও চিকিৎসার কারণে আমি দিল্লিতে থাকায় এতদিন তা জানাজানি হয়নি।’
শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে জানান, তার নাম প্রস্তাব করার বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী শিক্ষক সব্যসাচী দস্তিদারই তাকে ই-মেইল করে এ তথ্য দিয়েছেন। তবে নোবেল শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
এ ব্যাপারে সব্যসাচী দস্তিদারের সঙ্গে ই-মেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।