বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোলাম আযমের গুণকীর্তনের লেখা নুরুল কবিরের নয়

  •    
  • ২২ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৩৮

নুরুল কবির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। আমাদের মতন লোকের নাম ব্যবহার করে গোলাম আযমের নায্যতা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা খুবই অন্যায়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের প্রশংসা করে ফেসবুকে যে লেখা ছড়িয়েছে, সেটি তার লেখা নয় বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক নুরুল কবির।

গোলাম আযমের শাস্তির দাবিতে সবসময় সোচ্চার ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার ধারণা, এই লেখাটি জামায়াতের অনুসারীরা ছড়াচ্ছে।

নুরুল কবির আক্ষেপ করে বলেন, ‘জামায়াতের চরিত্র পাল্টায়নি।’

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক আরও জানান, তিনি ফেসবুকে কখনও বাংলা লেখাই দেন না।

কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে নুরুল কবিরের নামে গোলাম আযমের প্রশংসাসূচক লেখাটি আলোড়ন তুলেছে। এটা আদৌ তার লেখা কি না, এ নিয়ে বিতর্কও উঠেছে।

সেই লেখায় গোলাম আযমের মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের সমালোচনা করা হয়।

আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে মৃত্যুর পর জামায়াত নেতার জানাজায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করে লেখা হয়, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একজন মানুষের এমন শোক মিছিল দেখে আমার মতো অবাক হয়েছিল এ দেশের সকল গণমাধ্যম, বিশ্ব মিডিয়া।’

বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে এরই মধ্যে লেখাটি ছড়িয়ে গেছে। আর এর নিচে কমেন্ট বক্সে জামায়াতের অনুসারীরা নুরুল কবিরের প্রশংসা করছেন। তেমনি নুরুল কবির স্বাধীনতাবিরোধী নেতার প্রশংসা করে লিখেছেন ধারণা করে তার সমালোচনাও করছেন শত শত মানুষ।

‘৯০ বছর বয়সে ৯১ বছরের সাজা ভোগকারী গোলাম আযম’ শিরোনামে এই লেখাটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে এটি তার কি না, জানতে চাইলে নুরুল কবির নিউজবাংলাকে এসএমএসে বলেন, ‘এটা নকল। ফেসবুকে আমি কখনোই বাংলায় লিখি নাই। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড। ধন্যবাদ।’

ভুয়া লেখা ছড়ানোর দায়ে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না, ফোনে এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল কবির বলেন, ‘এ বিষয়ে মামলা করতে হলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করতে হবে। আমি সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি। এই আইন আমি ব্যবহার করব না।’

নিজ নামে অনেক ভুয়া ফেসবুক আইডি আছে জানিয়ে নিউ এজ সম্পাদক বলেন, ‘এ নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মুখে অনেককে জানিয়েছি, শুনিয়েছি। আমি এখন চেষ্টা করছি ওই (ডিজিটাল সিকিউরিটি) আইনের আশ্রয় ছাড়া কীভাবে এই ফেইক অ্যাকাউন্ট থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।’

‘গোলাম আযমের শাস্তি চেয়েছি সবসময়’

গোলাম আযম সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে নিউ এজ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করছিল, তখন পাকিস্তানি বাহিনীর কোলাবোরেটর (দালাল) হিসেবে জামায়াতে ইসলাম এবং গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছিল, বিভিন্ন সময়ে তার বিচার চেয়েছি। গোলাম আযমের রাজনীতি এবং ওই সময়ে ভূমিকার জন্য কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।’

১৯৭১ সালে গোলাম আযম ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির। তার নিজের লেখা বই জীবনে যা দেখলাম-এ তিনি লিখেছেন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভোটারদের বলতেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দিলে পাকিস্তান থাকবে না।

১৯৭১ সালের কালরাতে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিকামী মানুষদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে সময় বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে না দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেন গোলাম আযম।

সে সময় পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় রেডিওতে ভাষণ দেয়ার পাশাপাশি সমমনা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে সাক্ষাৎ করেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে। তাকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গঠন করা রাজাকার বাহিনী গঠনে জামায়াত ও গোলাম আযমের ভূমিকা ছিল প্রধান। আর যুদ্ধ শেষের আগে আগে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেখানে বিমান থেকে নামার পর রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের হাতে আরও ভারী অস্ত্র দেয়ার দাবি জানান।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর গোলাম আযম দেশে না ফিরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করে টাকা উত্তোলন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সুবিধাভোগীদের একজন এই স্বাধীনতাবিরোধী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রক্ষমতায়, সে সময় ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে ফেরেন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে।

১৯৯২ সালে জামায়াতে ইসলামী তাকে আমির ঘোষণার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে মাঠে নামে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সে সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে।

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণআদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের প্রতীকী বিচারও করা হয়েছিল। তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডতুল্য বলে ঘোষণা করা হয়।

সে সময়কার বিএনপি সরকার এই রায় ঘোষণাকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে। আর সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিলে একে একে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হতে থাকেন। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।

২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনতাবিরোধী এ নেতার ৯০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন গোলাম আযম। আর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে।

আপিলের নিষ্পত্তির আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের প্রিজন সেলে গোলাম আযম মারা যান ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর।

স্বাধীনতাবিরোধিতার প্রতীকে পরিণত হয়ে ওঠা এই রাজনীতিকের প্রশংসা করে লেখা নিয়ে নিজের অবস্থান জানানোর কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন করেন নুরুল কবির। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই কারা এগুলো করছে। কিন্তু আমার অনুমান, তারা জামায়াতে ইসলামের।

‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। আমাদের মতন লোকের নাম ব্যবহার করে গোলাম আযমের নায্যতা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা খুবই অন্যায়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর