‘‘এখানে আওয়ামী লীগের সুপারিশে কাজ হয় না’; আদেশক্রমে উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল, রংপুর’’ লেখা পোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
এ ছাড়া ওই পোস্টারের নিচে টিভির স্ক্রল থেকে স্ক্রিনশট নেয়া আরেকটি লেখা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- ‘রংপুর বিভাগীয় শিক্ষা অফিসে দুদকের অভিযান, উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম গ্রেপ্তার।’
এমন দুটি ঘটনা যুক্ত করে সম্প্রতি একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ছড়িয়ে পড়া সেই ছবির দিনক্ষণ কিছু উল্লেখ নেই।
নোটিশটি কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে তা জানে না রংপুর বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বর্তমান কর্মকর্তা এবং দুদকের কর্মকর্তারা।
রংপুর দুদকের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন ঘটনা তার জানা নেই। আর অতিসম্প্রতি বা চলতি বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস রংপুর অঞ্চলে দুদক কোনো অভিযান চালায়নি।’
রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই থেকে এই অফিসে দায়িত্বে আছি। আমার সময়কালে এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
কে দিয়েছিল নোটিশ?
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘‘এখানে আওয়ামী লীগের সুপারিশে কাজ হয় না’। আদেশক্রমে উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর অঞ্চল রংপুর’’; নোটিশটি ২০১৮ সালের ২১ মার্চের। সে সময় রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক ছিলেন মোস্তাক হাবীব (ভারপ্রাপ্ত)।
সে সময় মোস্তাক হাবীবের একান্ত সহকারী (পিএস) মো. শহিদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিসের পক্ষ থেকে বাস্তবে এরকম কোনো নোটিশ সেদিন দেয়া হয়নি। বাহিরের কিছু লোকজন অফিসের বাইরের ওয়ালে একটা পোস্টার লাগিয়ে তা ফেসবুকে দেয়। কিন্তু ওই ঘটনায় স্যারের কিছু হয় নাই। তিন বছর মেয়াদ শেষ করে তিনি ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বদলি হয়ে রাজশাহীতে যান। বর্তমানে রাজশাহীর হাজী মহসিন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।’
নাম প্রকাশ না করে রংপুর ডিডি (মাধ্যমিক) অফিসের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, এক সময় বিভাগীয় (মাধ্যমিক) এই শিক্ষা অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি স্যারের নজরে আসলে তিনি কড়াকড়ি আরোপ করেন। কাগজ ঠিক না থাকলে কোনো তদবিরেই কাজ করতেন না মোস্তাক হাবীব।
ঘটনার দিন কে বা কারা অফিসের দেয়ালে নোটিশটি সাঁটিয়ে দিয়ে ফোসবুকে ছড়িয়ে দেয়। সেটি সে সময় ভাইরাল হয়। তুমুল আলোচনায় হয় নোটিশটি নিয়ে।
মোস্তাক হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি তিন দিনের ছুটিতে ছিলাম। কিছুই জানতাম না।’
এদিকে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই পোস্টারের নিচে টিভি স্ক্রল থেকে নেয়া স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, ‘রংপুর বিভাগীয় শিক্ষা অফিসে দুদকের অভিযান উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ঘুষসহ গ্রেপ্তার।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটটির ঘটনা ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিলের। ওই দিন দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল ওই অফিসে অভিযান চালায়।
এ সময় ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরে বদলির জন্য আবেদনকারী শিক্ষক শারমিন আকতারের বদলির জন্য উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলামকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেন দুদক।
ওই ঘটনায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে ২২ এপ্রিল বিভাগীয় উপ-পরিচালক পদে সিরাজুল ইসলামের দায়িত্ব পান আব্দুল ওয়াহাব। বর্তমানে সিরাজুল ইসলাম অবসরে আছেন।
ঘটনাটির বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত করলেও এ নিয়ে সেই সময়ে কর্মস্থলে থাকা বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছু বলতে চাননি।
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের বদলি শুরু হয় জানুয়ারি মাসে, শেষ হয় ৩১ মার্চের মধ্যে। ওই শিক্ষক ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন এরিয়াতে বদলির জন্য আসেন। যেহেতু বদলির কার্যক্রম ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে, সুতরাং তাকে সিটি করপোরেশন এরিয়ায় কোনো নিয়মেই বদলির সুযোগ ছিল না।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাকে অনেকবার বলার পরেও তিনি মানছিলেন না, এমনকি তার স্বামী দুদকের সহকারী পরিচালক সেই ক্ষমতাও দেখান। কিন্তু তাতেও আমি তাকে বদলি করিনি। তখন আমাকে সরাসরি টাকার প্রস্তাব দিয়ে বলে, আমি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে এসেছি, এ বছর না হলে আগামী বছর বদলি দিয়েন। কিন্তু আমি রাজি হইনি, তাকে ধমক দিয়েছি। ঠিক সে সময়ে তার মোবাইলে একটি কল আসে। তখন তিনি টাকা আমার সেক্রেটারিয়েট টেবিলের উপর রেখে বাইরে যান, আর তখনই দুদকের টিম আমার অফিসে প্রবেশ করে।’
সাবেক এই উপ-পরিচালক সিরাজুল বলেন, ‘ওই শিক্ষকের স্বামী রংপুর দুদক অফিসের সহকারী পরিচালক ছিলেন সেই ক্ষমতা দেখিয়ে এই অন্যায় কাজটি করেছেন। আমি দুদকের স্পেশাল আদালত থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি বেখসুর খালাস পেয়েছি।’