ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো হাত মেলাননি বলে একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। গুজব রটেছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ক্ষোভের জেরে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানান রোনালডো।
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক কোটি মানুষ দেখেছেন ভিডিওটি।
ভিডিও সম্বলিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, চলতি বছরের মে মাসে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান পর্তুগালের এই মেগাস্টার।
বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ দাবি ভিত্তিহীন। পুরোটাই বানোয়াট।
গত ১৩ মে টিকটকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখেছেন ৯৬ লাখের বেশি মানুষ। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘মুসলিমদের সমর্থনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের বাড়িয়ে দেয়া হাত প্রত্যাখ্যান করলেন রোনালডো।’
১০ থেকে ২০ মে গাজার শাসকদল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আর ইসরায়েলের সামরিক সংঘাতের সময় ভাইরাল হয় ভিডিওটি।
একই দাবিতে ফেসবুক আর ইউটিউবেও ছড়ানো হয় ভিডিওটি। শুধু ফেসবুকে ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় এ সংক্রান্ত কয়েকটি পোস্ট দেখেছেন অর্ধলাখ মানুষ।
প্লাতিনির পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন রোনালদো। ছবিটি ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বরের। ছবি: সংগৃহীত
অথচ ভিডিওতে আসলে যে ব্যক্তির সঙ্গে রোনালডো হাত মেলাননি, তিনি মিশেল প্লাতিনি। তিনি ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ইউয়েফার সাবেক প্রেসিডেন্ট; ইসরায়েলের নন।
বর্তমানে ইতালিয়ান সেরি-আর ফরোয়ার্ড রোনালডো আগে খেলতেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে।
তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ২০১৪ সালে ক্লাবটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের শিরোপা জেতার পর ধারণ করা হয় ভিডিওটি।
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মিররের একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভিডিওটি।
ওই প্রতিবেদনের শিরোনামটির বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘মরক্কোতে ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে মিশেল প্লাতিনিকে ধমকেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো?’
প্রতিবেদনের প্রথম তিন অনুচ্ছেদ এমন: ‘আসলেই কি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে ইউয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনিকে ইচ্ছে করে উপেক্ষা করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো?
‘ইতিহাসে প্রথমবার সান লোরেনসোকে ২-০ গোলে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা জয়ের পর ফ্রেঞ্চম্যানকে পাশ কাটিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের জাদুকরকে।
‘ফিফার সেপ ব্ল্যাটারের সঙ্গে হাত মেলানোর পর প্লাতিনির পাশ কাটিয়ে সোজা চলে যান তিনি। সে সময় মাদ্রিদের ম্যানেজার কার্লো আনচেলোত্তিকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছিলেন প্লাতিনি।’
সাবেক ফরাসি ফুটবল তারকা প্লাতিনি ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউয়েফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর।
সে বছর ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ব্যালন ডর পান রোনালডো।
এর প্রতিক্রিয়ায় পুরষ্কারটি বিশ্বকাপজয়ী জার্মানির কোনো খেলোয়াড়ের পাওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন প্লাতিনি।
ওই মন্তব্য আর তারপর হাত না মেলানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে রোনালডো আর ইউয়েফা প্রেসিডেন্টের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন ইউয়েফার কমিউনিকেশনসের প্রধান পেদ্রো পিন্তো।
পর্তুগালের সংবাদপত্র দিয়ারিও দে নোতিসিয়াসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পিন্টো বলেন, ‘তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। পুরস্কার নেয়ার আগে প্লাতিনিকে শুভেচ্ছাও জানান রোনালডো।
‘রোনালডো যখন পদক নিতে পুরো দলের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন, তখন মিশেল প্লাতিনি কথা বলছিলেন কার্লো আনচেলোত্তির সঙ্গে। তাই সে সময় প্লাতিনির সঙ্গে কথা না বলে সামনে এগিয়ে যান রোনালডো।’
পিন্টোর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর।