বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

'জনসংখ্যা হ্রাসে মহামারির নাটক' সত্য নয়

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২১ ১৫:১৩

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে আত্তালি বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির বয়স যখন ৬০ বা ৬৫ পেরিয়ে যায়, তখন তার উৎপাদনশীলতা ও উপযোগিতা কমতে শুরু করে। সমাজের জন্য তখন তিনি অপচয়ের খাতায় চলে যান।’ একই সাক্ষাৎকারে পরের অংশে তিনি আরও বলেন, ‘আসলে সামাজিক অপচয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে মানবযন্ত্র বলে যে বিষয়টি, সেটির কার্যক্ষমতা একটু একটু করে কমে যাওয়ার চেয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়াই লাভজনক।’

পৃথিবী থেকে অতিরিক্ত জনসংখ্যার বোঝা কমাতে মহামারির নাটক সাজানো হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যাকুস আত্তালি, এমন দাবি করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে।

দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণে ‘দ্য ফিউচার অফ লাইফ’ বইয়ের প্রসঙ্গও টানা হয়েছে পোস্টটিতে।

কিন্তু বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ দাবি সত্য নয়।

গত ৪ জুন ইনস্টাগ্রামে প্রথম প্রকাশ হয় বৈশ্বিক জনসংখ্যা কমাতে মহামারি তৈরি করার দাবি সংক্রান্ত পোস্টটি। এতে লাইক রিঅ্যাকশন দিয়েছেন ২০০’র বেশি ব্যবহারকারী।

পোস্টে দাবির স্বপক্ষে ‘দ্য ফিউচার অফ লাইফ’ বইয়ের কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হয়। বলা হয়, ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বইটির লেখক জ্যাকুস আত্তালি।

ইনস্টাগ্রামে ইংরেজিতে লেখা পোস্টে যা বলা হয়েছে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়-

‘ভবিষ্যতে পৃথিবীর জনসংখ্যা কমানোর পথ খোঁজা হবে।

‘আমরা একটা কারণ খুঁজে বের করবো… একটা মহামারি… একটা ভাইরাস যা প্রবীণ আর মোটা মানুষদের মৃত্যুর কারণ হবে।’

মূল ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে লেখা আছে আরও অনেককিছুই।

এএফপি জানিয়েছে, ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রেসিডেন্ট প্রয়াত ফঁসোয়া মিতেহঁর সাবেক উপদেষ্টা ছিলেন জ্যাকুস আত্তালি। তিনি অনেক বই লিখেছেন। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম পোস্টে উল্লেখিত ‘দ্য ফিউচার অফ লাইফ’ নামের কোনো বইয়ের লেখক নন তিনি।

গুগলে ইংরেজিতে ‘দ্য ফিউচার অফ লাইফ’ লিখে সার্চ করলে যে বইটি পাওয়া যায়, সেটির লেখক যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অসবোর্ন উইলসন। বইটার প্রকাশকাল ২০০১ সাল।

তবে কাছাকাছি নামে আরও একটি বই রয়েছে। বইটির নাম ‘ফিউচার লাইফ’। এটি ফরাসি ভাষায় লেখা ‘লাভেনির দ্য ল্যা ভি’ বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ।

এই বইটির সঙ্গে আত্তেলির যোগসূত্র পাওয়া গেলেও তিনি এটির লেখক নন।

১৯৮১ সালে প্রথম প্রকাশ হয় ‘লাভেনির দ্য ল্যা ভি’। এর ইংরেজি সংস্করণ ‘ফিউচার লাইফ’-এর লেখক মাইকেল স্যালোমন। ‘ফিউচার লাইফ’-এর একটি অংশে রয়েছে আত্তালির সাক্ষাৎকার।

ওই সাক্ষাৎকারে আত্তালির কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘১২০ বছর বাঁচা কি সম্ভব বা এমন ইচ্ছা পোষণ করা কি স্বাভাবিক?’

বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা সেগার্স। প্রতিষ্ঠানটি বইয়ের একটি অংশের অনুলিপি দিয়েছে এএফপিকে, যেখানে আত্তালির উদ্ধৃতি রয়েছে।

সেটিতে দেখা যায় যে সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে আত্তালি বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির বয়স যখন ৬০ বা ৬৫ পেরিয়ে যায়, তখন তার উৎপাদনশীলতা ও উপযোগিতা কমতে শুরু করে। সমাজের জন্য তখন তিনি অপচয়ের খাতায় চলে যান।’

একই সাক্ষাৎকারে পরের অংশে তিনি আরও বলেন, ‘আসলে সামাজিক অপচয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে মানবযন্ত্র বলে যে বিষয়টি, সেটির কার্যক্ষমতা একটু একটু করে কমে যাওয়ার চেয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়াই লাভজনক।’

কিন্তু সাক্ষাৎকারে বিশ্বের জনসংখ্যা কমানো নিয়ে আত্তালি কোনো মন্তব্যই করেননি।

এ বিষয়ে এএফপিকে আত্তালি বলেছেন, ‘ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত লেখাটির পুরোটাই বানানো… বইটির যে উদ্ধৃতি টানা হয়েছে, তার সঙ্গে এসব দাবির কোনো সম্পর্কই নেই।’

আত্তালির লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ দ্য ফিউচার’ নামে একটি বই প্রকাশ হয় ২০০৯ সালে।

সেখানেও পৃথিবীর জনসংখ্যা কমাতে মহামারিবিষয়ক কোনো কথা বলেননি এই ফরাসি অর্থনীতিবিদ।

এ বিভাগের আরো খবর