করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার পর অনেকেই ভুগছেন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিশেষ করে সম্প্রতি কিছু পোস্টে দাবি করা হয় যে করোনার টিকা নেয়ার পর যাদের দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি, তারা ‘সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নন’।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ দাবি ভিত্তিহীন। টিকা নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির দেহ কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তার সঙ্গে সুস্বাস্থ্য বা দুর্বল স্বাস্থ্যের সম্পর্ক থাকা জরুরি নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় না ভুগলে টিকা কাজ করছে না বলে মনে করার কারণ নেই। টিকা গ্রহণে একেকজনের দেহে একেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখে দেয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিষয়ক পোস্টটি ফেসবুকে প্রথম প্রকাশিত হয় গত ১০ জুন।
থাই ভাষায় লেখার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়া ভালো বলে একটি ধারণা খুব প্রচলিত। কিন্তু এটা সঠিক নয়।
‘টিকা নেয়ার পর আপনার জ্বর হওয়ার অর্থ হলো, আপনার শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে আর তারই উপসর্গ হলো জ্বর। অর্থাৎ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী।
‘কিন্তু যদি আপনি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে না থাকেন, এর অর্থ হলো যে আপনার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে না। তাই শরীরের জন্য অপরিচিত টিকা দেহে প্রবেশের পরও আপনার দেহ তাতে বাধা দিচ্ছে না। অর্থাৎ আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নন।’
একটি পোস্ট প্রকাশ করেছেন আরও কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী।
থাইল্যান্ডের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপমহাপরিচালক ড. কাজর্নসাক কাইউচারাত জানান, করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর কার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা গুরুতর, তা সব সময় ব্যক্তির শারীরিকভাবে সবল বা দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দেয় না।
তিনি বলেন, ‘শরীরে অচেনা কিছুর প্রবেশে একেকজনের দেহের প্রতিক্রিয়া একেক রকম হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ধরনও আলাদা হয়।
‘কিছু খাবার খেলে অনেকের অ্যালার্জি দেখা দেয়, কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা হয় না। করোনার টিকার বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য।
‘যদি আপনি একই লিঙ্গ ও বয়সের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে তুলনা করেন, টিকা নিলে দুইজনের দেহের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হবে। কারণ তাদের দেহের বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে সবকিছু ভিন্ন।’
ডব্লিউএইচও বলছে, ‘করোনার টিকা নেয়ার পর কারও দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ার অর্থ টিকার অকার্যকারিতা নয়।
‘সাধারণ, মৃদু ও মাঝারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভালো বিষয়। এতে টিকা কাজ করছে বলে বোঝা যায়। কিন্তু তাই বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলে তাতে টিকা অকেজো প্রমাণ হয় না। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিকাটি ভিন্নভাবে কাজ করছে।’
যেসব দেশে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে, সেসব দেশে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহ পর ব্যক্তির দেহ করোনা প্রতিরোধে পূর্ণ সক্ষম বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া বা না দেয়ার কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সব টিকার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য।
কেবল জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা একটি ডোজের বলে এতে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ব্যাপার নেই।
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণে হাতে ব্যথা বা জড়তা, জ্বর ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া স্বাভাবিক। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না এবং এটাও অস্বাভাবিক নয়।