করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরপর দুই বছর সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ হচ্ছে সৌদি আরবে। কেবল দেশটিতে বসবাসরতদেরই দেয়া হচ্ছে হজের অনুমতি।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ সুবিধার অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার জন্য এ বছর হজ কোটা রাখা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট সম্প্রতি ভাইরাল হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ খবর সত্যি নয়। মালয়েশিয়া বা কোনো দেশই এ বছর হজ কোটার সুবিধা পাচ্ছে না।
মালয়েশিয়ার জন্য চলতি বছর হজ কোটা রাখার খবরটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর টুইটারে ছড়ায় মূলত ইন্দোনেশীয় ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে।
এতে বলা হয়, মহামারির কারণ দেখিয়ে চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য দেশের মানুষকে হজ করার সুযোগ না দিলেও মালয়েশিয়াকে তা দিচ্ছে রিয়াদ।
ফেসবুকে ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা অন্তরার একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া। ৪ জুন স্ক্রিনশটটি প্রথম প্রকাশ হয়। যদিও এতে থাকা খবরটি প্রকাশের তারিখ চলতি বছরের ১১ মার্চ।
প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে ইন্দোনেশীয় ভাষায়। এর শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘হজে মালয়েশিয়ার জন্য ১০ হাজার কোটা দিচ্ছে সৌদি আরব।’
ভেতরে লেখা হয়েছে, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? কেন মালয়েশিয়ার ১০ হাজার মানুষকে হজের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি দিতে কোটা রাখা হয়েছে, যেখানে মালয়েশিয়াতেই করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।’
ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত খলিল কুমাসের কাছে এর জবাবদিহিতা চাওয়া হয় ফেসবুক পোস্টটিতে।
একই স্ক্রিনশট ফেসবুকে আরও কয়েকটি, টুইটারে একাধিক আর ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট করেছেন অনেকে, যেগুলো শেয়ার হয়েছে অসংখ্যবার।
গুগল সার্চ করে দেখা যায়, স্ক্রিনশটের সংবাদটি অন্তরায় গত ১০ ও ১১ মার্চ প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে রয়েছে।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ ছড়ালে মুখ খোলেন খোদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহিদিন ইয়াসিন।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মহিদিন।
সেখানে বলা হয়, রিয়াদ সফরে মালয়েশিয়ার জন্য অতিরিক্ত হজ কোটা নিয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন তিনি।
মহিদিন বলেন, ‘হজে মালয়েশিয়ার জন্য সৌদি সরকার ১০ হাজার কোটা দিলেও সেটি কার্যকর হবে কেবল করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার পর।’
মহামারি পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেশি মানুষ হজের অনুমতি পেলেও সে সংখ্যা মাত্র ৬০ হাজারে সীমিত রেখেছে সৌদি সরকার। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার।
মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এই বার্ষিক মিলনমেলায় স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন দেশের ২০ লাখের বেশি মুসল্লি অংশ নিলেও মহামারির কারণে ঘটছে ব্যতিক্রম।
কেবল সৌদি আরবে বসবাসরতরাই ২০২০ ও ২০২১ সালের হজে অংশ নেয়ার অনুমতি পেয়েছেন।
এর মধ্যে এ বছর হজের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলবে দুই ডোজ টিকা গ্রহণের শর্তে।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক, আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ বাধ্যতামূলক।
চলতি বছর ১৭ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত হবে হজ।
গত ৩ জুন ইন্দোনেশিয়ার সরকার জানায়, ২০২০ সালের পর এ বছরও মহামারির কারণে দেশটি থেকে কেউ হজে যেতে পারবে না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়ায় করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
মহামারির দেড় বছরে ইন্দোনেশিয়ায় ২০ লাখের বেশি এবং মালয়েশিয়ায় প্রায় সোয়া ৭ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।