বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাঁশির সুরে গায়ে মৌমাছি বসার নেপথ্যে কী

  •    
  • ২২ জুন, ২০২১ ১৭:৩২

যশোরের কেশবপুরে মাহতাব মোড়ল নামে এক যুবক বাঁশি বাজালে তার গায়ে এসে বসে মৌমাছি। বিষয়টি এলাকায় জনমনে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে দেখছেন। নিউজবাংলা অনুসন্ধানে নেমে উদঘাটন করার চেষ্টা করেছে এর নেপথ্যের কারণ।

মাহাতাব মোড়ল। তার বাঁশির সুরে মৌমাছি এসে পড়ে তার শরীরজুড়ে। এলাকাবাসী অনেকে বিষয়টি অলৌকিক মনে করেন।মাহাতাবের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামে।মাহাতাব বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে তিনি মধু আহরণের কাজ করেন। ওই সময় বালতিতে শব্দ করে চাক থেকে মৌমাছি দূরে সরিয়ে দেয়ার কৌশল রপ্ত করেন তিনি। পরে টিনের থালার শব্দ শুনে মৌমাছি মৌচাক ছেড়ে তার কাছে আসতে শুরু করে বলে তিনি দাবি করেন।এরপর মাহাতাব মোড়লের ভাগনে তাকে বলেন, বাঁশি বাজালেও আসতে পারে মৌমাছি। তিনি শুরু করেন বাঁশি বাজানো। এতেও সফল হন। বাঁশি বাজিয়ে মৌমাছি বসানোর জন্য এলাকায় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ে মধু বিক্রি।

মাহাতাব মোড়ল জানান, ২০ বছর ধরে তিনি মধু সংগ্রহ করছেন। তাদের বাড়ি ছিল সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলায়। বাবার বৈবাহিক সূত্রে কেশবপুরের মোমিনপুর গ্রামে নানাবাড়িতে তাদের বসবাস।

সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে মাহাতাব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মধুর চাক ভাঙতে ভাঙতে মৌমাছির প্রতি তার ভালোবাসা তৈরি হয়।

মাহাতাব বলেন, ‘বাঁশি বাজিয়েই তিনি মৌমাছি গায়ে আনেন। এতে কোনো তন্ত্র-মন্ত্র নেই।’

কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় কোনো ভয় লাগে না বলে এমন কাজ করেন। মধু আহরণ করেই তার সংসার চলে। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে মাহাতাবের।রহস্য কীযশোর সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস শিরীন বলেন, ‘বাঁশির সুরে মৌমাছি আকৃষ্ট হয়ে মানুষের গায়ে উড়ে এসে বসার কোনো সুযোগ নেই। মৌমাছিরা তো মধুর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই কেউ যদি তার শরীরে মধু, হরমোনযুক্ত সেন্ট (সুগন্ধি) স্প্রে করে, তখন উড়ে এসে মৌমাছিরা বসতে পারে।’

ঘামের জন্য আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছি মাহাতাব মোড়লের গায়ে পড়ার যে দাবি তিনি করেছেন, তা অসম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে বাঁশি বাজিয়ে কোনো মৌমাছি গায়ে বসানোর সুযোগ নেই। তিনি অবশ্যই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘হয় তিনি তার গায়ে মিষ্টিজাতীয় কিছু মেখেছেন, কিংবা তিনি তার পালন করা মৌমাছিকে দীর্ঘদিন থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’

মাহাতাব মোড়লের কাছেও এটির ব্যাখ্যা জানতে চান নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি জানান, বাঁশি বাজালে তার সুরে আকৃষ্ট হয়েই মৌমাছি এসে শরীরে বসে। এর বাইরে কোনো রহস্য নেই। কিছুক্ষণ পরেই তিনি প্রতিবেদককে জানান, তিনি মৌমাছি গায়ে বসানোর কৌশল হিসেবে গায়ে সুগন্ধি মেখে নেন।

মাহাতাব মোড়ল নিউজবাংলাকে জানান, মধু ভাঙার সময় মধু গায়ে লেগে থাকলে এক-দুটা মৌমাছি এসে গায়ে বসত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কখনও ফুলের ঘ্রাণ, কখনও সুগন্ধি গায়ে মেখে বাঁশি বাজান। তখন বেশি পরিমাণে মৌমাছি গায়ে এসে বসতে শুরু করে।

তবে গায়ে ঘাম থাকলেও বাঁশি বাজালে মৌমাছি এসে বসে বলে দাবি করেন তিনি।

ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে মাহাতাব মোড়লের বাড়ি যান স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মৌমাছির কামড় থেকে রক্ষার পাওয়ার জন্যে কিছু মেখেছেন কিনা। তখন তিনি আমাকে বলেন, মৌমাছি কামড়ায় না, গায়ে সুগন্ধি মেখেছি, সুগন্ধি মাখলে ওরা গায়ে আসে।’

নিজের দাবিতে অটল থাকলেও নিউজবাংলার প্রতিবেদক যখন তার বাসায় গিয়ে বিষয়টি যাচাই করতে চান, তখন তিনি ফোনে জানান, করোনার কারণে তিনি এখন কারও সঙ্গে দেখা করবেন না।

এ বিভাগের আরো খবর