গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে সংঘাতের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্র।
ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, গাজার আবাসিক এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হামাস।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ২০১৮ সাল থেকেই ঘোরাফেরা করছে। মুখপাত্রের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
১১ মে ফেসবুক ও টুইটারে নিজের অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি শেয়ার করেন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র ওফির গেনডেলম্যান।
আরবি ভাষায় লেখা ভিডিওর শিরোনামের ইংরেজি করলে দাঁড়ায়, ‘গাজা উপত্যকায় আবাসিক এলাকার ভেতর সন্ত্রাসী হামাস মিলিশিয়া যে ইচ্ছাকৃতভাবে রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে, এটি তার অকাট্য প্রমাণ। এটি যুদ্ধাপরাধ।’
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহতের ঠিক পরের দিন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন মুখপাত্র গেনডেলম্যান।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের দখলে থাকা পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতের একপর্যায়ে ১০ মে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা শুরু হয়।
পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে বসতি স্থাপনকারীদের (সেটলার) পক্ষে ইসরায়েলের হাই কোর্ট রায় দিলে বিক্ষোভ শুরু হয়। অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদেও।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্রের শেয়ার করা ভিডিও চীন ও ইংরেজি ভাষায় একই দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয়।
এএফপির অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি ঘটনার সময় ওই ভিডিও শেয়ার হয়।
এদের মধ্যে একটি পোস্টে বলা হয়, ২০২০ সালে ইরাক থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়। অন্য একটিতে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালে সিরিয়ার মারাত আল-নুমান শহর থেকে ওই ভিডিও করা হয়।
এর শিরোনামে বলা হয়, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দিকে রকেট ছুড়ছে বিদ্রোহী অংশ।
২০১৮ সালে শেয়ার করা অন্য আরেকটি পোস্টের শিরোনামে লেখা ছিল, ভিডিওটি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দারা শহরের।
মূল ভিডিওটি ঠিক কবে ও কোথায় ধারণ করা হয়েছিল, তা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে ইসরায়েল ও হামাসের সাম্প্রতিক সংঘাতের কমপক্ষে তিন বছর আগের ভিডিও এটি, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস ও গাজার সশস্ত্র অন্য গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ চলে টানা ১১ দিন। গত বৃহস্পতিবার মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয় শুক্রবার থেকে।
টানা ১১ দিনের সংঘর্ষে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয় ৬৫ শিশুসহ ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয় প্রায় দুই হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।
অস্ত্রবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার যুদ্ধকবলিত মানুষের জন্য ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হয় গাজায়।