করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিলে এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে সম্পূরক পুষ্টিগ্রহণ- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে এমন সব তথ্য ও নিবন্ধ।
বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক বলছে, এসব দাবি ভুয়া। চিকিৎসকরা মানেন না এ তত্ত্ব। করোনা প্রতিরোধে টিকার কার্যকারিতাই যথেষ্ট বলে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) কর্মকর্তারাও।
২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি নিবন্ধের শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি টিকা গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেহের সম্ভাব্য ক্ষতি কাটাতে কী করণীয়’।
নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, ‘এমআরএনএ টিকা নিয়ে যথেষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি বলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে এবং দেহকে বিষক্রিয়ামুক্ত রাখার বিষয়গুলো জানা দরকার।’
লেখকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনার টিকার কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক শীর্ষ পাঁচ সম্পূরক পুষ্টি হলো আয়োডিন, জিঙ্ক, কার্বন ৬০, কোয়ার্সেটিন ও পাইরোলোকুইনোলাইন কুইনোন (পিপিকিউ)।
এগুলো নিয়মিত এমআরএন সেবনে এমআরএনএ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমবে ও কার্যকারিতা বাড়বে বলে দাবি করা হয় নিবন্ধে। যদিও কী পরিমাণে বা কখন-কিভাবে খেতে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে অনলাইনে কিভাবে এগুলো কেনা যাবে, সে লিংক দিয়ে দেয়া হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্র্যাকিং টুল ক্রাউডট্যাঙ্গল জানিয়েছে, ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট ভ্যাকসিনস’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ নিবন্ধটি ফেসবুকে সরাসরি শেয়ার করা হয়েছে এক হাজার ৮০০ বারের বেশি। টুইটারে ১৫ হাজার বেশি অনুসারী দেখেছেন পোস্টটি।
নিবন্ধটির লেখকের বিষয়ে তিনি চিকিৎসক এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই পোস্টে।
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় নিবন্ধটি। এর শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘যারা টিকা নিয়ে আফসোস করছেন, তারা কিভাবে এর সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ও সর্বনিম্ন ক্ষতি নিশ্চিত করবেন।’
‘প্রিপেয়ার ফর চেঞ্জ’ নামে আরও একটি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ হয়েছে এই একই নিবন্ধ।
এমআরএনএ টিকা
ম্যাসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা সংক্ষেপে এমআরএনএ টিকা মানুষের ডিএনএ বদলে দিতে পারে- এমন শঙ্কা জানানো হয়েছে এ নিবন্ধে। অথচ বহুদিন ধরে এসব আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তা জানিয়ে আসছেন গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা এই প্রযুক্তিতে তৈরি। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠান দুটি এ পর্যন্ত ১০০ কোটি ডোজের বেশি টিকা সরবরাহ করেছে।
সিডিসি বলছে, এমআরএনএ টিকা এমন এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যা মানবদেহের কোষকে দেহের ভেতরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অভ্যস্ত করে তোলে।
তাছাড়া এসব টিকা অপরীক্ষিত ও অনিরাপদ বলে যে দাবি করা হয়েছে এসব নিবন্ধে, সেটিও ভুয়া।
পর্যাপ্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহে এ টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিডিসির ওয়েবসাইটে।
সম্পূরক পুষ্টি
টিকা গ্রহণের ফলে দেহে কোনোরকম ঝুঁকি তৈরি হলে আয়োডিন, জিঙ্ক, কার্বন ৬০, কোয়ার্সেটিন ও পাইরোলোকুইনোলাইন কুইনোন (পিপিকিউ) সেবনে সে ঝুঁকি কমবে বলে দাবি করা হয়েছে নিবন্ধে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। টিকা গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সাধারণ প্যারাসিটামল খাওয়াই যথেষ্ট বলে মনে করেন জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. আমেশ আদালজা।
টিকার কার্যকারিতা বাড়ানোতেও এসব উপাদানের একটিও সহায়ক নয় বলে জানান মায়ো ক্লিনিকের ভ্যাকসিন রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ড. গ্রেগরি পোল্যান্ড।
নিবন্ধটি ভুলে ভরা বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।