বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুবকের জীবন বাঁচাতে প্রবীণের আইসিইউ ছাড়ার খবর ভুয়া

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৩১

যুবকের জীবন বাঁচাতে, তার জন্য বেড ছেড়ে দিতে স্বেচ্ছায় নারায়ণরাওয়ের বাড়ি ফেরার বিষয়টি নিয়েও জানতে চাওয়া হয় ডা. শীলুর কাছে। তিনি বলেন, ‘সে দিন কর্তব্যরত আমাদের কোনো চিকিৎসক বা কর্মী এমন কোনো ঘটনা দেখেননি। হাসপাতালটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১১০টি বেড আছে। এর মধ্যে ৯২টি আইসিইউ বেড। নারায়ণরাওয়ের বাড়ি ফেরার দিন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটা বেড খালি পড়ে ছিল।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত। রোগের ব্যাপকতায় মেডিক্যাল অক্সিজেন, ওষুধসহ প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট। বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিসহ বড় শহরগুলোতে রোগীর সংখ্যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বলে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতে মহামারির অন্যতম কেন্দ্র মহারাষ্ট্রের একটি ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে।

অচেনা এক যুবকের জীবন বাঁচাতে ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধের আইসিইউ বেড পেয়েও তা ছেড়ে দেয়ার খবর ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

স্থানীয় অনেক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছিল খবরটি, যাতে বলা হয়- হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার তিন দিনের মাথায় মৃত্যু হয় করোনায় আক্রান্ত বৃদ্ধ নারায়ণরাও দাভাদকরের।

যুবকের প্রাণ বাঁচাতে তার ‘মহৎ আত্মত্যাগের’ খবরটির সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। পত্রিকাটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করেই আইসিইউ ছেড়ে বৃদ্ধের বাড়ি ফেরার ঘটনাটি সত্যি। কিন্তু তার আত্মত্যাগের কোনো প্রমাণ মেলেনি বিস্তর অনুসন্ধানেও।

ঘটনার আদ্যপান্ত খতিয়ে দেখা হলে জানা যায়, ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সমাজসেবক সংঘের (আরএসএস) মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি বিবৃতি থেকে ছড়ায় খবরটি।

নারায়ণরাও দাভাদকরকে নিয়ে প্রকাশিত ভুয়া সংবাদ। ছবি: সংগৃহীত

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর ইন্দিরা গান্ধি রুগনালাই হাসপাতালের আইসিইউতে নারায়ণরাওয়ের জন্য একটি বেড পেতে সক্ষম হয় তার পরিবার। যখন তাকে হাসপাতালে আনা হয়, তখন ভীষণ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাও দিতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। এমন সময়ে তিনি এক নারীকে দেখতে পান।

করোনায় আক্রান্ত ৪০ বছর বয়সী স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন দেয়ার আকুতি জানিয়ে কাঁদছিলেন ওই নারী। পিতার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়ে তার সন্তানরাও কাঁদছিলেন। এ দৃশ্য দেখে হাসপাতালের এক কর্মীকে নারায়ণরাও বলেন, ‘৮৫ বছরের জীবনে যা বাঁচার ছিল, বেঁচে নিয়েছি। হাসপাতালে আর কোনো বেড খালি না থাকলে আমার বেডটি ওই যুবককে দিয়ে দিন। পরিবারের সদস্যদের জন্য তার বেঁচে থাকা দরকার।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ সময় নারায়ণরাওয়ের জামাতা ও চিকিৎসকরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে চিকিৎসা না নিলে তিনি বাঁচবেন না। আর এখন বেড ছেড়ে দিলে পরে আর কোনো বেড পাবেন তিনি, এমন নিশ্চয়তাও নেই। তাও নিজ সিদ্ধান্তে অনড় নারায়ণরাও তখন মেয়েকে ফোন করে জানান যে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। এ মুহূর্তে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা তখন বাবার অনুভূতি বুঝে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করে বাড়ি ফেরেন নারায়ণরাও। তিন দিন পর মারা যান তিনি।’

নাগপুর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক শীলু চিমুরকরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

তিনি বলেন, ‘গত ২২ এপ্রিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণরাওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অক্সিজেন দেয়া হয়। তার সঙ্গে স্বজনদের সার্বক্ষণিক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা। তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে আরও ভালো কোনো হাসপাতালে নিতে হবে, এমনটাও বলেছিলাম। সব শুনে তারা চলে যায়। দুই ঘণ্টা পর ফেরত এসে নারায়ণরাওকে ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু কেন, তা বলেনি। তখনও আমরা বলেছি তাকে ভালো কোনো হাসপাতালে নেয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের পরামর্শ না শুনে তার জামাতা আমোল পাচপোর সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করে তাকে নিয়ে চলে যায়। আমরাও তাকে ছেড়ে দিই হাসপাতাল থেকে।’

ভারতে হাসপাতাল শয্যা, অক্সিজেন সংকট ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণে ওই ভুয়া সংবাদটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়

যুবকের জীবন বাঁচাতে, তার জন্য বেড ছেড়ে দিতে স্বেচ্ছায় নারায়ণরাওয়ের বাড়ি ফেরার বিষয়টি নিয়েও জানতে চাওয়া হয় ডা. শীলুর কাছে। তিনি বলেন, ‘সে দিন কর্তব্যরত আমাদের কোনো চিকিৎসক বা কর্মী এমন কোনো ঘটনা দেখেননি।’

জানা গেছে, হাসপাতালটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১১০টি বেড আছে। এর মধ্যে ৯২টি আইসিইউ বেড।

হাসপাতাল থেকে নারায়ণরাওয়ের বাড়ি ফেরার দিন সব বেডেই রোগী ছিল কিনা জানতে চাইলে ডা. শীলু বলেন, ‘সে দিন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটা বেড খালিই পড়ে ছিল।’

এ বিষয়ে নারায়ণরাওয়ের জামাতা আমোল পাচপোরের সঙ্গেও কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। আত্মত্যাগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

আমোল বলেন, ‘আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলাম। তাই কথা বলার অবস্থায় নেই এখন। যা ঘটেছে তা সঠিক। তিনি যে সবাইকে খুব সাহায্য করতে চাইতেন সবসময়, এ নিয়ে প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এখন এ ব্যাপারে কথা বলে কী লাভ? তার মৃত্যুর চার দিন পেরিয়ে গেছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না আমি।’

আমোলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে নারায়ণরাওকে অন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল কি না। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক হাসপাতাল ঘুরে এই একটি হাসপাতালেই বেড পেয়েছিলাম। পরের ঘটনা তো শুনেছেনই। এরপর তাকে আমার ভগ্নিপতির বাড়িতে রেখে আসি। কারণ সে বাড়ির সবাই করোনা পজিটিভ ছিলেন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

তারপরেও কথা বলার জন্য চাপ দেয়া হলে শ্বশুরকে আরেকটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন আমোল। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর