সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের একটি ছবি ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ও তার প্রধান সহযোগী একটি বিমান থেকে নেমে আসছেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের এক সঙ্গে একই বিমানে ভ্রমণ না করার চর্চা দীর্ঘদিনের। ফলে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে বাইডেন ও হ্যারিসের এক সঙ্গে বেরিয়ে আসার ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
ভাইরাল পোস্টটিতে লেখা ছিল, ‘স্বাভাবিক কারণেই প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কখনোই এক সঙ্গে ভ্রমণ করবেন না বলে সুনির্দিষ্ট একটি নিয়ম আছে। তাহলে এখানে কী ঘটছে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলেনি কেন?’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ মার্চ পোস্টটি দেয়ার পর শেয়ার হয়েছে তিন হাজার ১০০ বারের বেশি।
এই ছবির পেছনের ঘটনায় অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বার্তা সংস্থা এএফপির আলোকচিত্রী এরিক বারাদাত সেটি তুলেছেন।এতে দেখা যায়, বাইডেন আর হ্যারিস এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে পর পর নেমে আসছেন।
তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এক সঙ্গে আকাশে ওড়েননি।
কমলা হ্যারিস আলাদা একটি বিমান- এয়ার ফোর্স টুতে চড়ে জর্জিয়াতে পৌঁছেছিলেন। এরপর সেখানে বাইডেনকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান অবতরণের পর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাতে ওঠেন কমলা। এরপর পরে দুই নেতা এক সঙ্গে নেমে আসেন।
উল্লেখ্য, এয়ার ফোর্স ওয়ান বা এয়ার ফোর্স টু কোনো সুনির্দিষ্ট বিমানের নাম নয়। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কোন বিমানে চড়বেন, তা বোঝাতে প্রতীকী এই নাম ব্যবহার করা হয়।
এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে দুই নেতার এক সঙ্গে নেমে আসার ছবি নিয়ে বিভ্রান্তির শুরু ব্রিটিশ-আমেরিকান প্রতিষ্ঠান গেটি ইমেজ সেটি প্রকাশের পর থেকে।
এএফপির কাছ থেকে নেয়া ছবিটি গেটি ইমেজ প্রকাশ করার সময় ক্যাপশন খানিকটা বদলে দেয়াতেই বাঁধে বিপত্তি। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘জর্জিয়ার মারিয়েত্তায় ডবিন্স এয়ার রিজার্ভ বেজে বাইডেন ও হ্যারিসের পৌঁছানোর মুহূর্ত।’
আটলান্টায় ১৬ মার্চের গোলাগুলিতে ছয় এশীয়সহ আটজন নিহতের ঘটনায় সেখানকার এশীয় আমেরিকান কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন বাইডেন ও কমলা।
নিয়ম নাকি রীতি?
হোয়াইট হাউজের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এক সঙ্গে বিমানে চড়তে পারবেন না, এমন কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়ম বা আইন নেই, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে এ চর্চা চলে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে বা তার মৃত্যু হলে দেশের তাৎক্ষণিক দায়িত্ব বর্তায় ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর।
ইউএসএ টুডেকে হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কখনও কোনো কারণেই এক বিমানে চড়েন না। এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম নয়। কিন্তু এটাই রীতি।’
এয়ার ফোর্স ওয়ানের ভেতরের তিনটি তলায় চার হাজার বর্গফুট জায়গায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী ও অন্যান্য অতিথিদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
কেবল ভাইস প্রেসিডেন্টের এই বিমানে ভ্রমণের অনুমতি নেই। তার জন্য রয়েছে আলাদা বিমান। এতে ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তারা যেতে পারবেন।