বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তোলা শিশুর চোখে জখম কেন

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৩৩

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওই শিশুর সঙ্গে তার এলাকার পথশিশুদের মারামারিতেই এই জখমের ঘটনা ঘটে। লাইভের পর এক ব্যক্তি শিশুটির সঙ্গে আদালত এলাকায় একটি সেলফি তোলেন। সেই সেলফি থেকে শিশুটির ছবিটি কেটে নিয়ে পড়ে ‘মনগড়া’ অভিযোগ তুলে ভাইরাল করা হয় ফেসবুকে।  

পুরান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এলাকা থেকে এক সাংবাদিকের লাইভের মাঝে এক পথশিশু ঢুকে পড়ে লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তোলার ভিডিও এবং পরে ওই শিশুর চোখে জখমের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী অভিযোগ তুলেছেন, লকডাউন নিয়ে সরকারি অবস্থানের বিরোধিতা করার কারণেই তাকে পুলিশ বা ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করেছে।

নিউজবাংলা ওই শিশুর সন্ধান এবং জখমের প্রকৃত কারণ বের করতে মঙ্গলবার থেকে পুরান ঢাকায় টানা অনুসন্ধান চালিয়েছে, কথা বলেছে এলাকাবাসী, পুলিশ কর্মকর্তা, সংবাদ কর্মীসহ অনেকের সঙ্গে।

এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ওই শিশুর সঙ্গে তার এলাকার পথশিশুদের মারামারিতেই এই জখমের ঘটনা ঘটে। লাইভের পর এক ব্যক্তি শিশুটির সঙ্গে আদালত এলাকায় একটি সেলফি তোলেন। সেই সেলফি থেকে শিশুটির ছবিটি কেটে নিয়ে পরে ‘মনগড়া’ অভিযোগ তুলে ভাইরাল করা হয় ফেসবুকে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এলাকা থেকে গত সোমবার দুপুরে ফেসবুকে লাইভ করেন সময়ের কণ্ঠস্বর নামের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের প্রধান প্রতিবেদক পলাশ মল্লিক।

তার কথা বলা প্রায় শেষের দিকে ক্যামেরার ফ্রেমে ঢুকে পড়ে এক পথশিশু। শিশুটি বলে ওঠে, ‘এই যে লকডাউন দিছে, মানুষ খাবে কী? সামনে ঈদ। এই যে মাননীয় মন্ত্রী একটা লকডাউন দিছে, এটা ভুয়া। থ্যাঙ্কু।’

ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণের জন্য হতবিহ্বল হয়ে পড়েন পলাশ মল্লিক। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে একবার ছেলেটা ঢুকে পড়েছিল। তখন আমার ক্যামেরার সঙ্গে থাকা একজন তাকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু ছেলেটা কতটা ট্যালেন্ট, আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি যখন শেষ করছিলাম, কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সেটাই ছিল আমার কাছে সবশেষ লাইভ। কেউ আমার কাছে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাঠিয়েছিল কি না আমি শিওর না।

সাংবাদিক পলাশ মল্লিকের লাইভের সময় হঠাৎ করে ক্যামেরার ফ্রেমে ঢুকে পড়ে শিশু মারুফ

‘সে এসে যে কথাগুলো বলেছে, আমি তো মানে… আমার পিটিসি শেষ। মুহূর্তের মধ্যে সে বলে এমনভাবে চলে গেল, আমি হালকা করে তাকিয়ে দেখলাম, সে চলে যাচ্ছে। আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। এটা তো লাইভ। লাইভ শেষ করার পর আমি ডাক দিয়েছিলাম তাকে। বলেছি, তুমি এই কাজটা কেন করলা ভাই? তখন দূর থেকে ছেলেটা আমাকে ভেঙাল। তখন বুঝলাম ছেলেটা অ্যাবনরমাল।’

পলাশ অভিযোগ করেন, ‘অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছে ছেলেটা সাংবাদিকদের হাতে মার খেয়েছে, অথচ তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আদালত প্রাঙ্গণে প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, সেগুলো চেক করলেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’

এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শিশুটির সঙ্গে একটি সেলফি তুলে নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন মো. রুহুল আমিন রুহুল নামের এক ব্যক্তি। নিজের ওয়ালে ছবিটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘স্যার এই যে ঈদের আগে লকডাউন দিছে মানুষ খাবে কি? মাননীয় মন্ত্রী একটা লকডাউন দিছে এটা ভুয়া, থ্যাংকু। আজকে জজকোর্টের সামনে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো।’

চোখে জখম থাকা মারুফের সঙ্গে সেলফি তুলে নিজের ফেসবুকে প্রথম শেয়ার করেন মো. রুহুল আমিন রুহুল নামে এক ব্যক্তি

রুহুল আমিনের পোস্টের নিচে একজন কমেন্ট করে জানতে চান, ছেলেটিকে কোথায় পাওয়া গিয়েছে। তার চোখ এমন ফোলা রয়েছে কেন। জবাবে রুহুল আমিন লেখেন, ‘জজকোর্টের সামনে। চোখে কি হইছে জিজ্ঞেস করি নাই। ফুটপাতে থাকে, নেশাও করে। হয়তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে পারে।’

রুহুল আমিনের সেই সেলফি থেকে শিশুটির ছবি কেটে ছড়িয়ে দেয়া হয় ফেসবুকে। মূল পোস্টদাতা কোনো কারণ না জানালেও বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়, শিশুটি সরকারের নির্যাতনের শিকার।

অনেক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়, মারুফ নির্যাতনের শিকার

নিউজবাংলা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে শিশুটির নাম মারুফ। তাকে বুধবার রাতে পাওয়া যায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায়। মা-বাবার বিষয়ে কোনো খোঁজ দিতে পারেনি সে। এই পার্ক ও আশপাশের এলাকাই তার ঠিকানা। আরও কয়েক পথশিশুর সঙ্গেই থাকছে মারুফ। মাদক নেয়ার কারণে তার কথা ও আচরণ পুরোপুরি অসংলগ্ন।

এলাকাবাসীরা জানান, শিশুটির দিন কাটে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। কেউ খাবার দিলে খায়, আবার অনেক সময় চেয়ে নিয়ে খায়।

রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ও এখানেই থাকে নেশা করে। কোনো ঠিকঠিকানা নেই।’

রহমান নামে স্থানীয় এক রিকশাচালক জানান, পথশিশুদের সঙ্গে মারামারিতেই আঘাত পেয়েছে মারুফ। তিনি বলেন, লকডাউনের সময়ে এসব শিশু বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে চাল-ডাল সংগ্রহ করে, পরে তা বিক্রি করে নেশাদ্রব্য কেনে।

মারুফের সঙ্গী কয়েক পথশিশু নিউজবাংলাকে জানায়, বিভিন্ন কারণে বন্ধুদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হয়, এ ধরনের মারামারিতেই মারুফ চোখে আঘাত পেয়েছে।

সহমর্মিতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা পারভেজ হাসান ফেসবুকে শিশুটিকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন। মারুফের সঙ্গে কথা বলার সময় পারভেজও সেখানে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল ছবিটি পেয়েছিলাম। ভেবেছি তাকে মারা হয়েছে। তাই আমি একটি পোস্ট দিয়েছি। ও আমাকে বলেছিল ওকে পুলিশ মেরেছে আর সেটা ড্যান্ডি (আঠা জাতীয় নেশা) করার জন্য।’

শিশুটি যেখানে আছে সেটি আংশিকভাবে কোতোয়ালি ও সূত্রাপুর থানার অধীন।

মারুফের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এমন কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত জানি না।’

অন্যদিকে, সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওর খোঁজ নিয়েছি। জানতে পেরেছি ও নেশা করে। তবে আমার কোনো পুলিশ ওর গায়ে হাত তোলেনি। নেশা করেই হয়তো ও এমন কথা বলেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর