ক্যাপসিকাম গাছে জন্ম নেয়া ফল বেল পেপারের নিচের দিকটি কত ভাগে বিভক্ত, তা দিয়েই সেটি নারী নাকি পুরুষ বোঝা যাবে বলে একটি পোস্টে দাবি করা হয়।
গত ২৯ মার্চ ওই ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, একটি বেল পেপার উল্টে দেখলেই সেটির জেন্ডার বোঝা যাবে।
পোস্টে লেখা হয়, ‘বেল পেপারের জেন্ডার জানতে সেটি উল্টে দেখুন। যেগুলোর নিচের দিক চার ভাগে বিভক্ত, সেগুলো স্ত্রী বেল পেপার। যেগুলোর নিচে তিনটি ভাগ, সেগুলো পুরুষ বেল পেপার।
‘স্ত্রী বেল পেপারে বিচিতে পূর্ণ থাকে, অধিক মিষ্টি হয় এবং কাঁচা খেলেই বেশি স্বাদ মেলে। অন্যদিকে পুরুষ বেল পেপার রেঁধে খাওয়াই উত্তম।’
তবে ইউএসএ টুডের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, বেল পেপারের জেন্ডার বলে কোনো কিছুর ভিত্তি বিজ্ঞানে নেই।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের ওই পোস্টটি ৩০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। অবশ্য এর আগে কয়েক বছর ধরেই পিন্টারেস্ট, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের একটি তথ্য ছড়াতে দেখা গেছে। যদিও সেগুলো ভাইরাল হয়নি।
২০১৩ সালের কিছু টুইটবার্তায় ব্যবহারকারীরা বেল পেপারের জেন্ডার আছে বলে দাবি করেছিলেন। তারা বেল পেপারের জেন্ডার বুঝতে উল্টে পেছনের দিক পরীক্ষা করার কথাও বলেছিলেন।
গুগল ট্রেন্ডস সার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুগলে সর্বাধিক খোঁজা হয়েছে ‘বেল পেপার জেন্ডার’।
ক্যাপসিকাম হিসেবে ফলটি পরিচিত হলেও ক্যাপসিকাম মূলত গাছের নাম, যার ফল হলো বেল পেপার।
ফ্যাক্টচেকে কী বেরিয়ে এসেছে
শুধু বেল পেপারই নয়, কোনো ফলেরই জেন্ডার নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইডের পমোলজিস্ট ডেভিড কার্প বলেন, ‘বিভিন্ন জাতের মরিচের নারী, পুরুষের ধারণা প্রচলিত থাকলেও তা ভুল। নারী-পুরুষ উভয় অঙ্গই আছে, এমন ফুল থেকে মরিচ হয়। এর কোনো জেন্ডার নেই।’
এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফ্রুট অ্যান্ড নাটসের তথ্য অনুযায়ী, বেল পেপার গাছ ‘নিখুঁত ফুলের’ জন্য সুপরিচিত। কারণ এর ফুলে বৃতি বা আবরণ, পুষ্পমণ্ডল এবং নারী ও পুরুষ প্রজনন অংশ সবই একটি করে থাকে।
ওই তথ্য অনুযায়ী, বেল পেপারের যে উৎস (ফুল), সেটিতে নারী-পুরুষ প্রজনন অঙ্গ আছে। কিন্তু ফলে তা নেই।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ ফুড, এগ্রিকালচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের গবেষক ট্রেসি টার্নার ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা দেন।
তিনি জানান, প্রতিটি বেল পেপারেই ডিম্বাশয় থাকে যেখান থেকে বিচির জন্ম এবং প্রতিটি মরিচই স্বনিষিক্ত। প্রতিটি বেল পেপারে বিচি তৈরি হয় পরাগায়নের পর। সেসব বিচি থেকেই নতুন গাছ হয়, যেখান থেকে আবার ফল হিসেবে আসে বেল পেপার।
অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির এক্সটেনশন সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বেল পেপারের ভাগগুলো কেবল এর বৈচিত্র্য আর এটি উৎপাদনের পরিবেশ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য দিতে সহায়ক। এর বেশি কিছু নয়।
বেল পেপারে বিচির পরিমাণ দিয়ে কী বোঝা যায়
ভাইরাল পোস্টে স্ত্রী বেল পেপারে বেশি বিচি থাকার উল্লেখ রয়েছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, যে বেল পেপার বড় বা যেগুলোতে চার-পাঁচটি ভাগ আছে, সেগুলোতে বিচি বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তিনটি ভাগের বেল পেপারে বিচি কম থাকবে তাও নয়।
বেল পেপারটি কত বড়, তার ওপরই নির্ভর করে বিচির সংখ্যা। আবার ছোট হলেও কখনো কখনো বেল পেপারে বেশি বিচি দেখা যায়।
কোন বেল পেপার বেশি মিষ্টি
ভাইরাল পোস্টে বলা হচ্ছে, ‘স্ত্রী’ বেল পেপার বা চার ভাগের বেল পেপারগুলো তিন ভাগের ‘পুরুষ’ বেল পেপারের চেয়ে বেশি মিষ্টি।
ট্রেসি টার্নার বলছেন, বেল পেপারের বাইরের আবরণ কেমন হবে তা নির্ভর করে এটি উৎপাদনের পরিবেশ ও এর জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। কাজেই এর সঙ্গে বেল পেপারের মিষ্টতা বা স্বাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্য যেকোনো ফল বা সবজির মতোই বেল পেপারেরও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রং বদলে যায়। এটি কাঁচা নাকি পাকা, তার ওপর নির্ভর করে এর স্বাদ-ঘ্রাণ।
সব বেল পেপারই জন্ম নেয় সবুজ রঙে। সময়ের সঙ্গে এটি পাকতে থাকে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রথমে হলুদ, তারপর কমলা রং ধারণ করে। আর সবচেয়ে পাকা বা বুড়ো বেল পেপারের রং লাল বা বেগুনিও হতে পারে।
অন্য সব রঙের বেল পেপার সবুজ রঙের বেল পেপারের চেয়ে স্বাদে বেশি মিষ্টি।