বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য মোদির জেল খাটা কতটা সত্য?

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২১ ০২:০৪

একাত্তরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে দিল্লিতে একটি বিশাল সমাবেশ হয়েছিল। সেই সমাবেশে গ্রেপ্তার হয়ে মোদির তিহার জেলে কিছুদিন কাটানোর তথ্য এর আগেও একাধিক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী নরেন্দ্র মোদি ১৯৭১ সালে ছিলেন ২১ বছরের তরুণ। সে সময় তিনি বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেছিলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকায় এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার ভাষণে এ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স তখন ২০ কি ২১, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমি ও আমার সহকর্মীরা সত্যাগ্রহে অংশ নিয়েছিলাম। আমি এমনকি কারাবরণও করেছিলাম।’

মোদির এ দাবির সত্যতা নিয়ে ভারতেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতাসহ অনেকে মোদির এ দাবি নিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন। মোদির জেলে যাওয়ার তথ্যে সন্দেহ প্রকাশ করে অনেকেই করেছেন বিরূপ মন্তব্য।

কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মোদি এমন একটি বিষয়ে কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন, যা তিনি করেননি।

তবে ভারতের পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে ১৯৭১ সালের আগস্টে নয়াদিল্লিতে একটি আন্দোলন হয়েছিল। সে সময়ের রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘের ১০ হাজার কর্মী ১২ দিনের ‘সত্যাগ্রহে’ অংশ নিয়েছিলেন। এতে ১ হাজার ২০০ নারী ও শিশুরও অংশগ্রহণ ছিল।

ভারতীয় জনসংঘ দলটিই বিভিন্ন ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে পরে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিতে পরিণত হয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার সে সময়ের একটি খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ১৯৭১ সালের আগস্টেই তুলেছিল ভারতের জনসংঘ। তাদের অভিযোগ ছিল, ইন্দিরা সরকার বিষয়টিতে কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় জনসংঘের কর্মীদের বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১২০টি বাস প্রস্তুত ছিল। ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্তত ৫০০ জন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে ১৯৭১ সালের আগস্টে ভারতের জনসংঘের সত্যাগ্রহ কর্মসূচি

দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামে সমাবেশে বক্তৃতা করেছিলেন দলটির সে সময়ের প্রেসিডেন্ট অটল বিহারি বাজপেয়ী। ওই জনসভায় দেয়া ভাষণে বাজপেয়ী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত-সোভিয়েত যৌথ বিবৃতি স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করতে দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে একটি ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।

বিজেপি নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীকে দেয়া বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননাপত্র

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অটল বিহারি বাজপেয়ীকে যে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা দেয়, সেটির মানপত্রে একাত্তর সালে দিল্লিতে ওই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের উল্লেখ আছে।

ওই কর্মসূচিতে নিজের উপস্থিতির দাবি করেছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটির অনলাইন পত্রিকা রিপাবলিকওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মোদি তার এই সত্যাগ্রহের কথা প্রথম জানিয়েছেন ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা নিয়ে লেখা তার স্মৃতিচারণামূলক বইতে। বইটির নাম সাংঘার্ষ মা গুজরাত, যেটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে।

এই বইয়ের প্রথম দিকের সংস্করণের ফ্ল্যাপে গুজরাটি ভাষায় লেখা ছিল, ‘আঘৌ বাংলাদেশ সত্যাগ্রহে সময় তিহার জেল জাই আভেলা ছে’, যার অর্থ বাংলাদেশ নিয়ে সত্যাগ্রহের সময় মোদি তিহার জেলে গিয়েছিলেন।

আরেকটি পত্রিকা দ্য কুইন্ট জানায়, মোদি ভারতের সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও একই দাবি করেছেন। নীলাঞ্জন মোদির জীবনী নরেন্দ্র মোদি: দ্য ম্যান, দ্য টাইমস-এর লেখক। ওই বইতে মোদি ১৯৭১ সালের ওই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিবরণ দিয়ে বলেছিলেন, সেটিই ছিল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের যাত্রাবিন্দু।

নীলাঞ্জন পরে ইকোনমিক টাইমস-এ এক নিবন্ধে এই ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে:

‘প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে মোদির প্রথম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল ১৯৭১ সালে, যখন তিনি যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে দিল্লিতে জনসংঘের একটি সত্যাগ্রহে অংশ নেন। তবে সরকার মুক্তিবাহিনীর পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন অনুমোদন করেনি এবং মোদিকে অল্প সময়ের জন্য তিহার কারাগারে কাটাতে হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর