ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বার্ষিকী ছিল গত ২৩ মার্চ। ৯০ বছর আগে ১৯৩১ সালের ওই দিনে ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের লাহোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের তিনজনকে পুলিশ কর্মকর্তা স্যান্ডার্স হত্যায় ফাঁসি দেয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাদা-কালো একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে। তার চারপাশে শত শত লোক ঘিরে আছে। কেউ কেউ বলছে, এই ছবিটিই তিন মুক্তিসংগ্রামীর শেষকৃত্যের ছবি।
ছবিটি দেখে নেটিজেনরা আবেগঘন অনেক পোস্ট শেয়ার দিতে থাকেন ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেইক নিউজ ওয়ার রুম (এএফডব্লিউএ) বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শেষে জানায়, যে ছবিটিকে তাদের শেষকৃত্যের বলে শেয়ার দেয়া হচ্ছে, সেটা আসল ছবি নয়।
এই ছবি ১৯৭৮ সালে অমৃতসরে নিরঙ্কারিদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ শিখের নিহতের শেষকৃত্যের। আর ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে ব্রিটিশ সরকার খুব গোপনে দাহ করেছিল।
প্রায় এক দশক থেকে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি এই ভুয়া তথ্য শেয়ার করে আসছিল। ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে।
বেশ কিছু নিউজ পোর্টাল ও সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধে তিন যোদ্ধার মৃত্যু দিবসে এই ছবিটিই ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৭৮ সালে কী ঘটেছিল
কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে ইন্ডিয়া টুডে ছবিটি সার্চ করে। সেখানে ভাইরাল হওয়া ছবিটিই বেশি আসে।
অনুসন্ধান শেষে দেখা যায়, ছবিটি ১৯৭৮ সালে নিরঙ্কারি ও শিখদের মধ্যকার সংঘর্ষের পরের ছবি।
নিরঙ্কারি শিখ সম্প্রদায়ের একটা গোষ্ঠী যারা বাবা বুটা সিংকে অনুসরণ করে। তারা অন্য কোনো ধর্মকে অনুপযুক্ত মনে করে। তবে মূলধারার শিখরা তাদের ধর্মবিরোধী বলে মনে করে।
শিখ জীবনধারার একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী আখন্দ কীর্তনী জঠা (একেজে) ‘কুরবানি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছিল যা এখন ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়।
বইটির তৃতীয় সংস্করণে বলা হয়েছে, অমৃতসরে বৈশাখ উদ্যাপনে ১৯৭৮ সালের ১৩ এপ্রিল দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।
ওই বইতে দাবি করা হয়, নিরঙ্কারি লোকজন সেদিন একটি শোভাযাত্রা বের করে। সেখান থেকে বিরোধী নেতা গুরু গ্রন্থ সাহেব ও শিখদের উদ্দেশে স্লোগান দিতে থাকে তারা। আর তখনই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ১৩ শিখ ধর্মাবলম্বী। নিহতদের অন্যতম ছিলেন শিখ নেতা ভাই ফাউজা সিং। শিখরা সে সময় থেকে দাবি করে আসছে, তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
কুরবানি নামের বইতে ১৩ শিখের শেষকৃত্যের ছবিটি আছে।
কী ঘটেছিল লাহোর কারাগারে
আরেক লেখক অনিল ভার্মা তার ‘রাজগুরু দ্য ইনক্রিডেবল রেভোল্যুশনারি’ বইতে লিখেছেন, লাহোর কারাগারে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুকে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বইটিতে বলা হয়েছে, তাদের শেষকৃত্যের জন্য মরদেহ গোপনে কারাগারের পেছনের দিকের দেয়াল ভেঙে ফিরোজপুরের কাছে সাতলুজ নদীর তীরের একটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন স্থানীয় লোকজন জানতে পারেন সেখানে মরদেহ দাহ করা হচ্ছে, তারা একে একে জমায়েত হতে থাকে।
কারাগারের লোকজন ভয়ে আধা পোড়া মরদেহগুলো সাতলুজ নদীতে ফেলে দেয়। সেই সঙ্গে বালু দিয়ে দাহ করা স্থানকে ঢেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
‘দ্য এক্সিকিউশন অফ ভগৎ সিং: লিগ্যাল হিয়ারসিস অফ রাজ’ বইতে সাতবিন্দর সিং দাবি করেছেন, ফাঁসির পর ওই তিনজনের মরদেহ টুকরো টুকরো করে সেটা ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়।