‘চা পানের জন্য’ দুই কোটি টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে।
টাকা না দেয়ায় ত্রিশালে জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে বাধাও দেয়া হয়। তবে পরে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব তাদের কাছে চাঁদা চেয়েছেন। না পেয়ে নেতাকর্মীদের দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা লিখিত অভিযোগও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। প্রশাসন বলছে, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে লিখিত অভিযোগে কাজ বন্ধের কথা বলা হলেও চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
তবে ছাত্রলীগ নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করে অপপ্রচার বলেছেন। উপাচার্য বলেছেন, ছাত্রলীগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটার মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে কী নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি, সেটি জানাতে পারেননি তিনি।
ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব। ছবি: নিউজবাংলা
এক মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শ্রমিক চলে গেছেন। এখন মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ঢিমেতালে চলছে কাজ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেএসবিএল-ইউসিসিএল জয়েন্ট ভেন্সারের স্থানীয় ব্যবস্থাপক আবু হানিফ জানান, গত বছর ৭০ কোটি টাকায় ১০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পান তারা। এর মধ্যে ১৮ কোটি টাকার কাজ শেষে বিল তুলেছেন ৯ কোটি টাকার মতো।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েক দফায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের নির্দেশে নেতাকর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন। কারণ জানতে চাইলে তাকে রাকিবের বাসায় ডাকা হয়। পরে বাসায় গেলে চা পানের জন্য রাকিব দুই কোটি টাকা চান। এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পরে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।’
হানিফ জানান, এক মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় বিষয়টির সমাধান চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। তবে কোনো সুরাহা না হওয়ায় তিনি শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেননি। এ কারণে তার ১৩০ শ্রমিকের মধ্যে এখন মাত্র ২০ জন আছেন। এখন শুরু হলেও শ্রমিকসংকটে কোনো রকমে কাজ চলছে।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, কাজ শুরুর কয়েক মাস পর শিক্ষার্থীরা এসে প্রায়ই কাজ বন্ধ করে দিত। কারণ জানতে চাইলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের সঙ্গে দেখা করতে বলত।
তবে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগ উন্নয়নে বিশ্বাসী। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এমন কিছু করবে না। চাঁদা দাবি তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথায় কী কাজ হচ্ছে, তাও ছাত্রলীগ জানে না। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাতে এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হুমায়ূন কবীর জানান, একাডেমিক ভবনের কাজ বন্ধের বিষয়ে তারা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে সেখানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা উল্লেখ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রলীগের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটি সমাধান হয়ে গেছে। এখন কাজ শুরু হয়েছে। সমস্যা নেই।’