ভারতে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রথম ধাপে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়া হয়েছে।
তবে ১৬ জানুয়ারি দেশটির কর্নাটক রাজ্যের টুমকুরে টিকা দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে এক পুরুষ ও এক নারীকে টিকা নেয়ার ভান করতে দেখা যায়। ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায় এক জন নার্স ওই দুই জনকে টিকা দিচ্ছেন, এমন পোজ দিয়ে আছেন। কিন্তু তিনি আসলে টিকা দেননি।
ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে জ্যোতি গনেশ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘টুমকুরের কর্মকর্তারা ক্যামেরার সামনে টিকা নেয়ার ভান করছেন, কেন এই মিথ্যা প্রচার? যেখানে বিজেপি সেখানেই জালিয়াতি।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে, ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটিতে থাকা টুমকুর জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ডিএইচও) নগেন্দ্রপ্পা এবং জেলা স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ডা. রজনী সংবাদমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধেই টিকা নেয়ার পোজ দেন। টুমকুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও নিশ্চিত করেছেন, ওই দিনই তাদের টিকা দেয়া হয়।
ফ্যাক্ট চেক
ইন্ডিয়া টুডে ওই দিনে প্রকাশিত ‘প্রজাভানি’ নামে একটি সংবাদপত্রে ডিএইচও নগেন্দ্রপ্পার টিকা নেয়ার ছবি পেয়েছে। ওই ছবিতে ক্যাপশন ছিল, ‘টুমকুর জেলা হাসপাতালে টিকা নিচ্ছেন ডিএইচও নগেন্দ্রপ্পা।’
এ বিষয়ে টুমকুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকেশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ইন্ডিয়া টুডে। তিনি ভিডিওটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি যে কর্মকর্তাদের ভিডিওতে দেখছেন তারা টিকা নিয়েছেন। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই দিন টিকা দিতে দেরি হয়েছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা দেয়া শুরু হওয়া পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমকর্মীরা অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলেন না। এ কারণে ওই কর্মকর্তারা পোজ দেন। পরে তাদের সবাইকে টিকা দেয়া হয়। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চান্নাবাসাপ্পাও দাবিটি বিভ্রান্তিকর বলে নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা টিকা নেয়ার ভান করেছেন দাবিটি সত্য নয়। যখন আমি এ নিয়ে তদন্ত করি, তখন জানতে পারি, কো-উইনে (আবদনের অ্যাপ) প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে টিকা দেয়ার প্রক্রিয়াটি দেরি হচ্ছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের যেহেতু তাড়া ছিল, তাই কর্মকর্তারা কয়েকটি ছবির জন্য পোজ দেন। পরে একই দিন তাদের টিকা দেয়া হয়।’
ভিডিওতে থাকা ডিএইচও নগেন্দ্রপ্পাও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘কো-উইন অ্যাপের আবেদন অনুযায়ী, ১৬ তারিখ তাদের টিকা নেয়ার দিন ছিল না। তবে পরে তাদের তারিখ এগিয়ে আনা হয়। এ কারণে তাদের আবার নিবন্ধন করতে হয় এবং প্রক্রিয়াটি দেরি হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের টিকা নেয়ার বিষয়টি কাভারের জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর তাড়া দেয়। এজন্য আমরা শেষ পর্যন্ত কিছু ছবির জন্য পোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
ওই দুই জনের টিকা নেয়ার অফিসিয়াল কাগজও পেয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
ওই দিন টুমকুর জেলা হাসপাতালে থাকা ‘ভারথা ভারতী’ পত্রিকার সাংবাদিক রাঙারাজু জানান, ভিডিওটি হাসপাতালের যেই কক্ষে ধারণ করা হয়, সেখানে থাকা সংবাদমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা দেয়া শুরু করতে যত সময় প্রয়োজন ছিল, তারা ততক্ষণ অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। এজন্য তারা কর্মকর্তাদের পোজ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন, যাতে তারা দ্রুত চলে যেতে পারেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কেউ ভিডিওটি ধারণ করেছেন এবং বিভ্রান্তিমূলক দাবিতে এটি ছড়িয়ে পড়েছে।