জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহতের ঘটনায় পাকিস্তানের সীমানায় অনুপ্রবেশ করে হামলা চালিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের বালাকোটে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই হামলায় ৩০০ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল দেশটি।
পাকিস্তানের ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তখন জানিয়েছিল, ওই হামলায় কেউ নিহত হননি। একটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং কয়েকটি গাছ পড়ে যাওয়া ছাড়া কোনো ক্ষতিই হয়নি।
সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক এক কূটনীতিক ওই হামলায় ৩০০ জন নিহতের কথা স্বীকার করেছেন বলে ভারতের একাধিক শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইন্ডিয়া টুডে, সিএনএন নিউজ ১৮, রিপাবলিক ভারত, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতো সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক জাফর হিলাল একটি টেলিভিশন বিতর্কে বালাকোট হামলায় ৩০০ জঙ্গি নিহতের কথা স্বীকার করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ভারতেরই সংবাদমাধ্যম দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়া। তারা জানিয়েছে, টেলিভিশন বিতর্কের ভিডিওটি পরিবর্তন করা হয়েছে। হিলাল এমন কোনো বক্তব্য দেননি।
ফ্যাক্ট চেক
রিপাবলিকান ভারত তাদের প্রতিবেদনে ম্যাভরিক ভারত নামে এক জনের টুইট যুক্ত করে। ওই ভিডিওতে হিলালকে নিহতের ঘটনা স্বীকার করছেন দেখা যায়।
পরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ওই টেলিভিশন বিতর্কের মূল ভিডিওটি বের করে দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়া। গত ২৩ ডিসেম্বর ভিডিওটি ইউটিউবে দিয়েছে হাম নিউজ।
চার মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে হিলাল বলেন, ‘আপনাদের (ভারতের) অভিপ্রায় ছিল একটি মাদ্রাসায় হামলা করা, যেখানে ৩০০ শিশু পড়াশোনা করত। এর অর্থ, আপনাদের (ভারতের) উদ্দেশ্য ছিল ৩০০ মানুষকে হত্যা করা। কিন্তু তারা সেখানে ছিল না, যে কারণে আপনারা একটি ফুটবল মাঠে বোমা নিক্ষেপ করেন।’
ভিডিওটির ০৭-০৯ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ওই সময়ে হিন্দি ‘মারনা (হত্যা করতে চাওয়া)’ শব্দটির ‘ন’ অংশটি খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে ফেলে দেয়া হয়েছে। এতে শব্দটি ‘মারা (হত্যা)’ শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া হিলাল হামলাটির ব্যর্থ হওয়া এবং ফুটবল মাঠে বোমা ফেলার কথাগুলো যে অংশে বলেছেন, সেটিও পরিবর্তন করা হয়। মূল ভিডিওর ওই অংশে বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের ছবি দেখানো হলেও ভাইরাল ভিডিওতে তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি দেখানো হয়।
জাফর হিলালও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর ভুল ধরিয়ে দিয়ে টুইট করেছেন। আসল ভিডিওটিও তিনি পোস্ট করেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের ভুল ধরতে পারে।
সিএনএন নিউজ পরে প্রতিবেদনটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) নামের সংবাদ সংস্থা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলে।