যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক খ্যাত কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালানোয় সবাই যখন রিপাবলিকান সমর্থকদের এক হাত নিচ্ছে, তখন সামনে আসছে আরেকটি প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে হেরে যাওয়া কোনো দলের এটাই কি প্রথম উন্মত্ততা?
বেশি দূরে নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসই বলছে নির্বাচনে হেরে গিয়ে অনেকটা একই আচরণ করেছে ডেমোক্র্যাট সমর্থকরাও।
একুশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচনেই সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন জর্জ ডব্লিউ বুশ।
২০০০ সালের ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটের সংখ্যায় হারলেও ২৭১টি ইলেক্টোরাল জিতে কোনো মতে হোয়াইট হাউজের মসনদে বসেন এই রিপাবলিকান।
সেই হার মানতে প্রস্তুত ছিল না ডেমোক্র্যাট শিবির। অনেক জটিলতা পাকানোর পর শেষ পর্যন্ত বুশের কাছে হার স্বীকার করেন আল গোর। অথচ ফ্লোরিডার ফলাফল নিয়ে তখনও বিবাদ মেটেনি।
বুশের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে বিদায়ী ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা হোয়াইট হাউজে তাণ্ডব চালায়।
বিষয়টি নিয়ে পরে তদন্ত হয়। এতে দেখা যায়, বিদায়ী প্রেসিডেন্টের কর্মকর্তা কর্মচারীরা হোয়াইট হাউজে সরকারি সম্পদের ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।
হোয়াইট হাউজের কম্পিউটারের কীবোর্ডে পর্যন্ত ভাঙচুর চালায় তারা। অনেক কম্পিউটারের কীবোর্ডের ‘ডব্লিউ’ বাটনটি তুলে ফেলা হয়। কেটে দেয়া হয়েছিল টেলিফোনগুলোর লাইন। ফাইলে ভরা আলমারিগুলো গ্লু দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়। অফিসের প্রিন্টারগুলোতে আঁকা হয়েছিল অশ্লীল ছবি।
ডেমোক্র্যাটদের এমন তাণ্ডব দেখা যায় ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরও। নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে হোয়াইট হাউজের ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প।
বড় ব্যবধানে হারলেও ডেমোক্র্যাটদের তা হজম করতে কঠিনই হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিছিল করে ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা। তাণ্ডব চালানোর দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন অনেকে।
নির্বাচনের আগেও ডেমোক্র্যাটদের সহিংসতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল ট্রাম্প শিবিরকে। লস অ্যাঞ্জেলসের ‘হলিউড ওয়াক অব ফেম’ এ ট্রাম্পের নামে খচিত তারকায় ভাঙচুর চালানো হয়।
জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে বুধবার ক্যাপিটল হিলসে তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা।
তবে বর্ণবাদী ও কট্টরপন্থি মানসিকতার হওয়ায় এসব ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের প্রতিক্রিয়াটা বেশিই দেখা যায়। ট্রাম্পের আশকারায় গত চার বছরে তাদের প্রভাব আরও বেড়েছে। গত কয়েক বছরে আরও বেশি বর্ণবাদী হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসবের জেরেই ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন সসিংতা দেখাল রিপাবলিকানরা।
গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হারের পর থেকেই সহিংস আচরণ দেখিয়ে আসছিল ট্রাম্প শিবির। নির্বাচনের ফল আটকে দিতে আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয় তারা। এসবে রিপাবলিকান সমর্থকদেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।
তারা মরণ কামড় দিল বুধবার। জো বাইডেনের জয়ের চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিতে এদিন কংগ্রেসে বসে যৌথ অধিবেশন। এর মধ্যেই নির্বাচনের ফল ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টায় তাণ্ডব চালায় ট্রাম্পের সমর্থকেরা। অচল করে দেয় গোটা ওয়াশিংটন ডিসি।
১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সেনারা পুড়িয়ে দেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের আইকনিক ভবন ক্যাপিটল হিল এমন তাণ্ডব আর দেখা যায়নি।
কিন্তু এসব সহিংসতায়ও কোনো কাজ হয়নি। সংবিধান ও আইনের আলোকেই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস।
উপায় না পেয়ে হার মেনে নিলেও সহিংসতার জন্য অনুতাপ নেই ট্রাম্পের। বরং হারের মধ্যেই গৌরব দেখালেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনের ফল মেনে নেয়া নিয়ে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন- ‘প্রেসিডেন্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা সময়টা এখানেই শেষ হলেও, সত্যিকার অর্থে এটা আমাদের মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন লড়াইয়ের শুরু।’