ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘গৃহবন্দি’ করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি করেছে তার দল আম আদমি পার্টি (এএপি) ও দিল্লি পুলিশ।
মঙ্গলবার আম আদমি পার্টি দাবি করে, দেশটিতে চলমান কৃষক আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর কেজরিওয়ালকে কার্যত গৃহবন্দি করা হয়েছে। তাকে কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছে না। তার সরকারি বাসভবনেও কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই কেজরিওয়াল জানান, বাধা দেয়া না হলে তিনি অবশ্যই কৃষকদের ‘ভারত বনধ’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সমর্থন দিতেন।
যদিও কেজরিওয়াল ও তার দলের এ দাবি অস্বীকার করেছে দিল্লি পুলিশ। এক টুইটে তারা জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সব ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করছেন। তাকে কোথাও যেতে বাধা দেয়া হয়নি।
সব মিলিয়ে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
ফ্যাক্ট চেক
মঙ্গলবার কেজরিওয়াল তার সরকারি বাসভবন থেকে পার্টির কর্মীদের বলেন, ‘ভারত বনধ’ সফল হওয়ায় তিনি খুশি। ঘরে বসেই তিনি আন্দোলনরত কৃষকদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।
ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইকে কেজরিওয়াল বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, আজ আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাদের সমর্থন জানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। আমার মনে হয়, তারা আমার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আমাকে যেতে দেয়নি।’
তবে এএপির দাবি অস্বীকার করে দিল্লি পুলিশ বলছে, ‘এএপি ও অন্য দলের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে সাধারণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করা হয়নি।’
তারা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনের একটি ছবিও টুইট করেছে। সেখানে বলা হয়, ‘তিনি (কেজরিওয়াল) রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সব অধিকার ভোগ করছেন। ফটকের ছবিটি তা প্রমাণ করছে।’
দিল্লি পুলিশ যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে চার জনকে ফটকের সামনে দেখা গেছে।
তবে ওই ছবির বিপরীতে এএপি যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে অনেক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কেজরিওয়ালের বাড়ির সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া।
সেখানে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আটক কৃষকদের রাখতে স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলখানা করার প্রস্তাবে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। এখন কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। এর অর্থ কি তিনি গৃহবন্দি? এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এত সদস্য কেন?’
এএপির আরেক নেতা বিধায়ক সৌরভ বারাদওয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গতকাল (সোমবার) সিন্ধু সীমান্তে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে কেজরিওয়াল তাদের ‘সেবক’ হিসেবে কাজ করতে ও কৃষকদের সঙ্গে থাকার জন্য বলেন।”
সোমবার কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আইনসভার সদস্যদের একটি দলকে পুলিশ মারধর করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার আরেক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, কেজরিওয়ালকে গৃহবন্দি করার দাবিগুলো ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’।
‘এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ নেই। মুখ্যমন্ত্রী তার স্বাভাবিক কাজ করছেন এবং বাসা থেকে বেরও হচ্ছেন। শান্তি বজায় রাখতে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।’
আম আদমি পার্টি ও দিল্লি পুলিশের পাল্টাপাল্টি দাবির কারণে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, কেজরিওয়ালকে আসলেই গৃহবন্দি করা হয়েছে কি না। তবে তার চলাচল যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট।
সূত্র: দ্য কুইন্ট