বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার টিকা: মাইক্রোচিপ, ডিএনএ পরিবর্তন ও আরও ‍গুজব

  •    
  • ২১ নভেম্বর, ২০২০ ১১:১৮

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার দশম মাসে এসেও পাওয়া যায়নি কোনো কার্যকর ওষুধ। রোগটি থেকে বাঁচতে সবাই এখন তাকিয়ে করোনার টিকার দিকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকা নিয়েও ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুজব।

টিকার মাধ্যমে শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া, ডিএনএ পরিবর্তন ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য।

বিবিসি এসব তথ্য নিয়ে চালিয়েছিল অনুসন্ধান। এতে দেখা যায়, তথ্যগুলোর অধিকাংশই গুজব বা আংশিক সত্য।

বিল গেটস ও মাইক্রোচিপ

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকেই মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের বিল গেটসকে যুক্ত করে ছাড়িয়েছে নানা মিথ্যা তথ্য।

বিল গেটসেকে নিয়ে এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ জনস্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সময় করা তার নানা কাজ ও করোনার টিকা তৈরির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো গুজবটি হলো করোনা মহামারি মূলত কিছু নয়। করোনার টিকা দেয়ার নামে আসলে মানুষের শরীরে গোয়েন্দা মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া হবে। আর পুরো পরিকল্পনার পেছনে রয়েছেন বিল গেটস।

এই দাবিগুলো সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ নেই। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও বিবিসিকে জানিয়েছে, তথ্যগুলো সর্বৈব মিথ্যা।

এ নিয়ে চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ৬৪০ জনের ওপর একটি সমীক্ষা চালায় ‘ইউগভ’ নামে একটি সংস্থা। সেখানে দেখা যায়, প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দেশটির ২৮ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, মানব শরীরে মাইক্রোচিপ বসানোর জন্য টিকা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন বিল গেটস।

ডিএনএ পরিবর্তন

ট্রাম্প-সমর্থক ওয়েবসাইট নিউজম্যাক্সের হোয়াইট হাউজের সংবাদদাতা সম্প্রতি এক টুইটে ফাইজার ও বায়োটেকের টিকার বিষয়ে ‘সাবধান’ থাকতে বলেন।

দুই লাখ ৬৪ হাজার ফলোয়ার থাকা এমারাড রবিনসন টুইটটিতে দাবি করেন, ‘এটি (টিকা) আপনার ডিএনএ পরিবর্তন করে।’

ফেসবুকে আরও কিছু পোস্টে করোনার টিকা ডিএনএতে পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এ নিয়ে বিবিসি তিন আলাদা বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারা বলেছেন, করোনার টিকা মানবদেহের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন করবে না।

জেনেটিক্সের মৌলিক বিষয়ে ভুল ধারণা থেকে এ ধরনের তথ্য ছড়াচ্ছেন অনেকে।

টিকাটিতে ভাইরাসের জিনগত উপাদানের একটি অংশ রয়েছে, যাকে আরএনএ বলা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি অ্যালমন্ড বলেন, ‘আরএনএর ব্যবহার মানবকোষের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন আনে না।’

ফাইজারের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু উইজার জানান, প্রতিষ্ঠারটির টিকা ‘মানব শরীরের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন আনে না। এটি শুধু শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির নির্দেশনা দেয়।’

চলতি বছরের মে মাসে এ বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া জনপ্রিয় একটি ভিডিও নিয়েও তদন্ত করেছে বিবিসি।

তারা জানিয়েছে, ভুল বোঝাবুঝির মূল আসলে টিকা তৈরির ধরন থেকে উদ্ভূত।

ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকায় ‘মেসেঞ্জার আরএনএ’ বা ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

টিকাটি করোনাভাইরাসের ত্বকে থাকা একটি প্রোটিন তৈরির জন্য শরীরকে নির্দেশ দেয়। এটি তৈরি হলে শরীর ভাইরাসটি প্রতিরোধ ও অ্যান্টিবডি তৈরির বিষয়ে জানতে পারে।

রবিনসনের টুইটে ‘এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি এর আগে কখনও পরীক্ষা বা অনুমোদিত হয়নি’ বলেও জানানো হয়।

এটি সত্য, এর আগে কোনো এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা অনুমোদন পায়নি। তবে গত কয়েক বছরে এমআরএনএ টিকা নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে।

অধ্যাপক অ্যালমন্ড বলেন, ‘শুধু নতুন প্রযুক্তি বলেই যে আমাদের ভয় করা উচিত, বিষয়টি তেমন নয়।’

নতুন টিকাগুলো কঠোর সুরক্ষা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই কেবল তা সবার জন্য ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া কল্পকাহিনি নিয়ে প্রতিবেদন করা ক্লাইরা ওয়ার্ডেল বলেন, এমআরএনএ প্রযুক্তির নিয়ে ‘তথ্য ঘাটতি’ রয়েছে। সবার জন্য সঠিক তথ্য নিশ্চিত করলেই আর গুজব ছড়াবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

রবিনসনের ওই টুইটে বহুল প্রচলিত আরেকটি গুজব উঠে এসেছে- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

তিনি দাবি করেছেন, টিকার ৭৫ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবীর ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যদিও ফাইজার ও বায়োটেক বলছে, ট্রায়ালে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

লন্ডনের কিংস কলেজের ফার্মাসিউটিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. পেনি ওয়ার্ড বলেন, অন্য টিকার মতো এর (করোনার টিকা) ক্ষেত্রেও ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা, জ্বর, পেশিতে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা ও ক্লান্তির মতো স্বল্পস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

অধ্যাপক ওয়ার্ড আরও জানান, এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জ্বরের টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও হয়। এগুলো খুব সাধারণ। প্যারাসিটামলের মতো ওষুধেই এগুলো সেরে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর