ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের লাইন যাওয়া নিয়ে বিরোধিতার অবসান হয়েছে আগেই। তবে সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে লাইন স্থাপন নিয়ে আবার সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
বিশেষ কোণ থেকে তোলা ছবি দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে, মেট্রোরেলের লাইনে ঢেকে যাবে রাজু ভাস্কর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। ট্রলও করা হচ্ছে। নানা ধরনের কার্টুনও আঁকা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, মেট্রোরেলের পিলারগুলো ভেঙে ফেলার দাবিতে হাতে লেখা পোস্টারও সাঁটানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
কিন্তু সত্যিই কি রাজু ভাস্কর্য ঢেকে যাবে?
মেট্রোরেল প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবদুল বাকী নিউজবাংলাকে জানান, রাজুভাস্কর্যের উপর দিয়ে তো নয়ই, এমনকি ঘেঁষেও যাচ্ছে না মেট্রোরেলের লাইন।
তিনি জানান, ভাস্কর্যের ভিত্তির ১৭ মিটার দূরে বসানো হয়েছে পিলার। উপরে লাইন স্থাপন হলে সেটা হয়তো কিছুটা কাছাকাছি আসবে। তবে এমনকি দিনের একটি ছোট অংশ ছাড়া ছায়াও হয়তো পড়বে না ভাস্কর্যের ওপর।
এ কর্মকর্তা জানান, পিলারের ওপর যে লাইন বসানো হচ্ছে, সেটাও ভাস্কর্যের বেদি থেকে সাত মিটার দূরে থাকবে।
তাহলে এই কথা কেন ছড়াল?
এর পেছনে দায়ী একটি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের ছবি। একটি বিশেষ কোণ থেকে ছবি তুলে প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শিগগিরই মেট্রোরেলে ঢাকা পড়তে যাচ্ছে রাজু ভাস্কর্য।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেলের পিলারে যে লঞ্চিং গার্ডার বসানো হয়েছে, তা ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক স্থানে অবস্থান করছে যে, একেক কোণ থেকে ছবি তুললে এর অবস্থান একেক জায়গায় বোঝা যায়।
কোনো একটি কোণ দেখলে মনে হয় লাইন বুঝি ভাস্কর্যের বেশ দূর দিয়ে যাবে। আবার অন্য একটি কোণ থেকে দেখলে মনে হবে ভাস্কর্য ঘেঁষে যাবে। আরেক কোণ থেকে দেখলে মনে হবে ভাস্কর্যের উপর দিয়ে যাবে।
মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের রুটটি শাহবাগ থেকে চারুকলা হয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য ঘুরে দোয়েল চত্বর হয়ে প্রেসক্লাবের দিকে যাবে। তবে রুটটি রাজু ভাস্কর্যের উপর দিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে বিবেচনায় রেখেই মেট্রোরেলের রুট তৈরি হচ্ছে।’
মেট্রোরেল প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবদুল বাকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের কারসাজিতেই এমন তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের লাইন যাওয়ার বিরোধিতাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, ভেতর দিয়ে লাইন গেলে শব্দের কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। তবে বছর কয়েক আগে এরও ব্যাখ্যা দিয়েছিল নির্মাতা সংস্থা। পরে বিরোধিতা স্থিমিত হয়ে আসে।
আবদুল বাকী বলেন, ‘মেট্রোরেল নির্মাণে ক্যাম্পাসের পরিবেশকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস অতিক্রম করার সময় গতি কম রাখা ও শব্দদূষণ কমাতে সাউন্ডপ্রুফ ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার একটি মেট্রোরেল। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই প্রকল্প উদ্বোধনের কথা আছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। পরে আরও পাঁচটি রুটেও করা হবে এই রেল।
বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল আরও কয়েক বছর আগে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে লাইন নেয়ার বিরোধিতা করে নাগরিক সমাজের একটি অংশের আন্দোলনের কারণে প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়।