যুক্তরাষ্ট্রে তিন নভেম্বরের ভোটে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে লড়াই চলছে হাড্ডাহাড্ডি।
বিপুল সংখ্যক ডাক ভোটের কারণে এ বছর নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল পেতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্নায়ুক্ষয়ী এ গণনার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভোট নিয়ে নানা দাবি করে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে।
প্রথম দিকে এগিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে অনেক রাজ্যে পিছিয়ে পড়ে নির্বাচনে কারচুপিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প। প্রমাণ ছাড়া ট্রাম্পের এসব দাবিগুলো নিয়ে তার সমর্থকরাও নেমে পড়েছেন ফেসবুক টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
এর মধ্যে ভাইরাল হওয়া তিনটি দাবির সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
মিশিগানে বিভ্রান্তিকর ভোটের হিসাব
নির্বাচনের রাতে মিশিগানের ভোটের হিসাবে ট্রাম্পের ভোট না বাড়লেও হঠাৎ করে বাইডেনের পক্ষে এক লাখ ৩০ হাজার ভোট বেশি দেখা্নো হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে একটি ছবি ভাইরাল হয়। ট্রাম্পও ছবিটি টুইট করেন, যা ভোট জালিয়াতির জল্পনা-কল্পনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
সাধারণত রাজ্য কর্তৃপক্ষ ভোট গণনার তালিকায় একসঙ্গে বড় একটি অংশ যোগ করে। তবে ট্রাম্পের পক্ষে কোনো ভোট না বাড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
ওই তালিকা তৈরি করা নির্বাচন নিরীক্ষণ ওয়েবসাইট ডিসিশন ডেস্ক জানিয়েছে, ‘অঙ্গরাজ্যটির দেয়া একটি ফাইলের ত্রুটির কারণে এটি হয়েছিল... রাজ্য কর্তৃপক্ষ এটি বোঝার সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করা হয়।’
ম্যাট ম্যাকোভিয়াক নামে যে ব্যক্তির টুইট থেকে ট্রাম্প ছবিটি নিয়েছিলেন; তিনি পরে আসল টুইটটি মুছে ফেলেন ও দুঃখপ্রকাশ করেন। যদিও এর আগেই ছবিটি অনেকস্থানে ছড়িয়ে যায়।
বুধবার ভোরের দিকেই ছবিটি ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থক ও রক্ষণশীলরা ছড়িয়ে দেন।
মিশিগানের ব্যুরো অফ ইলেকশনের সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করলে তারা ত্রুটিপূর্ণ ফাইলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা জানিয়েছে, এই পর্যায়ের কোনো ফল ‘চূড়ান্ত’ নয়।
উইসকনসিনে ভোটারের চেয়ে ভোট বেশি
নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য উইসকনসিনে নিবন্ধিত ভোটারের চেয়ে ভোট বেশি পড়েছে বলে দাবি করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন।
এক ব্যক্তি টুইট করেন, “‘ব্রেকিং’ উইসকনসিনে যে ভোট পড়েছে তার চেয়ে কম মানুষ নিবন্ধন করেছেন। রাজ্যটিতে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৩১ লাখ ২৯ হাজার আর ভোট দিয়েছেন ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৯২০ জন। এটি নিশ্চিত জালিয়াতি।”
মূলত নিবন্ধিত ভোটারের যে সংখ্যা টুইটটিতে বলা হয়েছে তা আগের হিসাব। ১ নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী অঙ্গরাজ্যটিতে ভোটারের সংখ্য ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৬।
অঙ্গরাজ্যটিতে ভোটের দিনও অনেকে নিবন্ধন করেছেন। এ কারণে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা বর্তমান হিসাবের থেকে আরও বেশি হতে পারে।
টুইটটি পরে মুছে ফেলা হলেও এর স্ক্রিনশট ফেসবুক ও টুইটারে এখনও অনেকে ছড়াচ্ছেন।
মার্কার দিয়ে বৃত্ত ভরাটে ভোট বাতিল
নির্বাচনের দিন অ্যারিজোনায় মার্কার কলম দিয়ে ভোট দেয়ায় তা বাতিল হবে বলে একটি গুজব ছড়ায়।
বিভিন্ন ব্যক্তির টুইটে দাবি করা হয়, ব্যালটের বৃত্ত ভরাটে মার্কার কলম সরাবরাহ করে অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার ভোট বাতিলের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভোট গণনার যন্ত্রগুলো কীভাবে মার্কার দিয়ে পূরণ করা ব্যালট পড়তে পারে না তা দেখাচ্ছেন এক নারী।
এরপরই ক্যামেরার পেছনে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, এসব ভোট গণনা করা হবে না এবং অনেককে ভোট দিতে মার্কার ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে।
মার্কার দিয়ে ব্যালট পূরণ করলে ভোট বাতিল হওয়ার এ দাবি মিথ্যা।
অ্যারিজোনার সেক্রেটারি অফ স্টেটস কেটি হবস টুইটারে নিশ্চিত করেছেন, ‘আপনি নিজে ভোট দিলে আপনার ব্যালট গণনা করা হবে, আপনি কোন কলম ব্যবহার করেছেন তা কোনো বিষয় নয়।’
হবস সিএনএনকে বলেন, ‘এমনকি যদি কোনো কারণে মেশিন ব্যালট পড়তে না পারে, আমাদের সেগুলো গণনা করার উপায় রয়েছে। সব ব্যালট গণনা করা হবে। রিপাবলিকানদের ব্যালট বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে বলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।’