যুক্তরাষ্ট্রে ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প।
গত কয়েক সপ্তাহের প্রচারে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের খরচ, চীন, ইরানসহ বিভিন্ন বিষয়ে নানা মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প, যার অনেকগুলোই সত্য নয়।
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল
দাবি: অভিবাসীদের স্রোত ঠেকাতে ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রচারে মেক্সিকো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বদলে দেয়াল নির্মাণের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। এই জন্য অর্থ দিতে মেক্সিকোকে বাধ্য করবেন বলেও তখন দাবি করেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি নিউ হ্যাম্পশায়ার সমাবেশেও ট্রাম্প বলেন, ‘যাই হোক, মেক্সিকো দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ দিচ্ছে।’
নর্থ ক্যারোলাইনায় সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এর জন্য অর্থ পেয়েছি। মেক্সিকো এর জন্য অর্থ দেবে, কারণ আমরা এর জন্য ফি নিতে যাচ্ছি।’
ফ্যাক্ট: দেয়াল নির্মাণে মেক্সিকো নয়, যুক্তরাষ্ট্রই খরচ বহন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দেয়াল নির্মাণে কানাকড়িও দিতে রাজি হয়নি মেক্সিকো সরকার।
২০১৮ সালের মে মাসে দেয়াল নির্মাণে অর্থ দেয়ার ব্যাপারে মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনইয়া নিয়েতো টুইট বার্তায় বলেন, ‘এখনও নয়, কখনোই নয়।’
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেক্সিকোর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের উপায় খুঁজছেন ট্রাম্প। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের কাছ থেকেই দেয়াল নির্মাণের অর্থ আসছে।
চীন থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
দাবি: নর্থ ক্যারোলাইনার ওই সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত চীন থেকে ভ্রমণে আমি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম। বাইডেন পুরোপুরি এর বিরোধী ছিলেন। তিনি আমাকে জেনোফোবিকও (বিদেশিদের ব্যাপারে ভয় বা ঘৃণা থাকে এমন ব্যক্তি) বলেছেন। আর এখন তিনি বলছেন এটি আরও আগে করা উচিত ছিল। যদিও তিনি এটি করতে চাননি।’
ফ্যাক্ট: ট্রাম্পের এ তথ্য মিথ্যা। ট্রাম্প কখনও চীন থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নি; তিনি এটি সীমাবদ্ধ করেছিলেন। আর বাইডেন ভ্রমণের বিধিনিষেধ নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জন্য তাকে জেনোফোবিক বলেন নি। বিদেশিদের সম্পর্কে ট্রাম্পের অন্য বক্তৃতা নিয়ে তিনি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
এ ছাড়া বাইডেন ওই বিধিনিষেধের বিরোধিতা করেননি বরং দীর্ঘদিন অবস্থান স্পষ্ট না করে থাকার পর তা সমর্থন করেন।
ইরানকে অর্থ দেয়া
দাবি: নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে সেই অনিরাপদ চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছি, তাই না? ইরানের পারমাণবিক চুক্তি, যেখানে ওবামা তাদেরকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন।’
ফ্যাক্ট: পারমাণবিক কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করার ব্যাপারে বহুজাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে ইরানকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার দেননি ওবামা। ওই চুক্তির আগে বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা ইরানের নিজের ১৫০ বিলিয়ন ডলারে ছাড় দেয়া হয়েছিল মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে তখন এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। তবে এটি ছিল সামরিক সরঞ্জামের জন্য আগেই ইরানের পরিশোধ করা অর্থ।
রাশিয়া থেকে বাইডেনের অর্থ প্রাপ্তি
দাবি: নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘মস্কোর মেয়রের স্ত্রী তাকে (বাইডেন) সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন।’
ফ্যাক্ট: ওই নারী এ অর্থ দেননি।
মস্কোর সঙ্গে বাইডেনের ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে রিপাবলিকান কংগ্রেসের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে হান্টারের সঙ্গে যুক্ত একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়া হয়।
এই অর্থ মোটেও জো বাইডেন পাননি। হান্টার এটি নিজে নিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণও নেই। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ পেয়েছে বিনিয়োগ সংস্থা।
এ বিষয়ে হান্টার বাইডেনের আইনজীবী এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার মক্কেলের ওই ফার্মের প্রতি ন্যূনতম আগ্রহও নেই।
সূত্র: এপি