বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এনইউবিতে ইউজিসির তদন্ত কমিটি নিয়ে অনাস্থা ট্রাস্টি বোর্ডের

  • ঢাবি প্রতিনিধি   
  • ৬ মে, ২০২৫ ১৯:১৫

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইউবি)- নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ককে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দিয়ে তাকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।

গত মঙ্গলবার বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কমান্ডার মো. মোস্তফা শহীদ বিএন ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তদন্ত কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে সরিয়ে নিরপেক্ষ কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে তদন্ত কার্য পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগপত্রে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যের অভিযোগ, আলতাফ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক দুই ট্রাস্টির ঘনিষ্ঠজন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তাদের পক্ষে নিতে এই দুই ট্রাস্টির প্ররোচনাতেই ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক করেছেন আলতাফ হোসেনকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে এনইউবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এবং আর্থিক সংকটে পড়লে তৎকালীন ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য আইন অনুযায়ী পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন। পরবর্তীতে গঠিত নতুন ট্রাস্টি বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রশাসনে পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন নিজেদের এনইউবির ট্রাস্টি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন ফোরামে তারা এনইউবি পরিচালনায় পুনঃঅধিকার দাবি করেন। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ দাখিল করে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানান তারা।

সেই দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যদের অভিযোগ, এই তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো এবং লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মনোনীত করার চেষ্টায় জড়িয়ে পড়েন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শুরুতে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু নোমান মো. ফারুক আহমেদকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। পরে জানা যায়, নোমান ফারুক সরাসরি অভিযোগদাতাদের ঘনিষ্ঠজন। ঘনিষ্ঠতার এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে এনইউবির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড ইউজিসি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করে। প্রমাণ পাওয়ার পর ইউজিসি নোমান ফারুককে তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেয়।

এরপর ড. আনোয়ার হোসেন পুনরায় সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আলতাফ হোসেনকে তদন্ত কমিটির নতুন আহবায়ক হিসেবে প্রস্তাব করেন। তিনিও লুৎফর ও বোরহানের পূর্বপরিচিত ও একই এলাকার বাসিন্দা, এবং অতীতে এনইউবিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন।

এই বিষয়ে গত ২৯ এপ্রিল ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যানের লিখিত আবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন লুৎফর রহমান এবং বোরহান উদ্দিন এর ঘনিষ্ঠ। লুৎফর রহমান এবং জনাব বোরহান উদ্দিন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য থাকাকালীন সময়ে আলতাফ হোসেন খণ্ডকালীণ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাছাড়া সাবেক ট্রাস্টি সদস্য বোরহান উদ্দিন এবং আলতাফ হোসেন একই এলাকার হওয়ায় তাদের মধ্যে আগে থেকেই সুসম্পর্ক বিদ্যমান এবং পূর্ব থেকেই পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্টতা রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, এসব কারণে আলতাফ হোসেন দ্বারা নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত কার্য পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব।

আলতাফ হোসেনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তদন্ত কমিটি প্রদত্ত রিপোর্টে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিগণ সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হবেন বলেও উল্লেখ করা হয় লিখিত অভিযোগপত্রে।

জানা যায়, আলতাফ হোসেন আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব এবং অগ্রণী ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সুবিধাভোগী হিসেবে চুক্তিভিত্তিতে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, লুৎফর রহমান ও বোরহান উদ্দিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি তারা আবার ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, তবে আনোয়ার হোসেনের আত্মীয়দের এনইউবির ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই উদ্দেশ্যে আনোয়ার হোসেন তাদের মনোনীত লোকদের বারবার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পদে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন ইউজিসি সদস্যের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ গভীর উদ্বেগজনক। ইউজিসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার একজন সদস্য যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ ও অনৈতিক সুবিধা লাভে জড়িত হন, তবে তার আর দায়িত্বে থাকার ন্যূনতম নৈতিক অধিকার নেই। দ্রুততার সঙ্গে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে ইউজিসি সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

অভিযোগে বিষয়ে যা বললেন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন

তদন্ত কমিটির আহবায়ক আলতাফ হোসেনের সঙ্গে সাবেক দুই ট্রাস্টির ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোাহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একই এলাকার হওয়া বা ট্রাস্টি থাকা অবস্থায় ক্লাস নেওয়া—এসব বিষয় ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে কি? এসব বিষয় থেকে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে এমনটা বলা যায় না।’

‘যদি ঘনিষ্ঠমানুষ দিয়েই তদন্ত কমিটিও হয়, তাহলে আমার ক্ষতি কী? এখানে তো আমার কোনো স্বার্থ নেই। আমি শুধু চাই সমস্যাটির সমাধান হোক। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার পেছনে উনারা কী কারণ দেখছেন, সেটি উনারাই ভালো জানেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করছি দেশের স্বার্থে, আমার ব্যক্তিগত কোনো এজেন্ডা নেই। কারা তদন্ত কমিটিতে থাকছে, কে রিপোর্ট করছে—এসব আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়। আমি প্রচণ্ড সততার সঙ্গে কাজ করছি।’

আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টিবোর্ড কাকে সৎ মনে করে সেটা আমি জানি না। তবে আমি চেষ্টা করি যাঁরা সৎ ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত এমন মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোর সমাধান করাই আমার মূল লক্ষ্য।’

একই এলাকার মানুষ হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আলতাফ হোসেন ও বোরহান উদ্দিন যে একই এলাকার কিনা সেটা আমার জানা নেই। কার বাড়ি কোথায়, সেটা আমার বিষয় না।’

ট্রাস্টি বোর্ডের বায়াসড (পক্ষপাতদুষ্ট) রিপোর্টের আশঙ্কা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এক এলাকার দুইজন থাকলেই কি সেটা অপরাধ? এসব হাস্যকর অভিযোগ। গুরুত্বপূর্ণ হলো—আমাদের কোনো স্বার্থ আছে কি না, আর আমরা কতটা সৎভাবে কাজ করছি।’

পরিবারের সদস্যকে ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি হাস্যকর ও ভিত্তিহীন। আমি এসব বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। সততার সঙ্গে কাজ করাই আমার নীতির অংশ।’

বোরহান উদ্দিন ও লুৎফর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই নামগুলো আমার কাছে নতুন। আমি তাদের চিনিও না, ফোন নম্বরও নেই, কখনো দেখা হয়নি। সামনে দেখলেও চিনতে পারব না।’

ট্রাস্টি বোর্ডের লিখিত আবেদন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘তারা চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এখন উনি যেটা সঠিক মনে করবেন, সেটাই করবেন। আমরা উনার অধীনে কাজ করছি।’

ট্রাস্টিবোর্ডের লিখিত আবেদন নিয়ে জানতে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর