রাজধানীর পূর্বাচলে বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারের চাপায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মুনতাসির মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশীর মোড়সংলগ্ন এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদী পক্ষকে বহন করতে হবে, নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদী পক্ষকে বাধ্য করতে হবে, তদন্ত কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, আহতদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যাতে আর কারও প্রাণ না ঝরে সে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফুট সড়কে প্রাইভেটকারের চাপায় পুলিশের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা মাসুদ নিহত হন। গুরুতর আহত হন সহপাঠী মেহেদী হাসান খান ও অমিত সাহা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থী মো. তূর্য বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি যে অপরাধী প্রভাবশালী হলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে, ভিক্টিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, হুমকি-ধমকি দিয়ে, ভিক্টিমের পরিবারকে মামলা না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। প্রাথমিকভাবে মামলা হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব খাটায়, কিংবা আরও নানাভাবে ছাড় পেয়ে যায়। এটা আমরা হতে দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, হত্যা মামলা লেখার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আমাদের ভাই হত্যার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার চাই। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতার বিপরীতে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হোক।’
বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুনতাসির মাসুদ নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বুয়েটের আরও দুই শিক্ষার্থী।
পূর্বাচল এলাকার নীলা মার্কেটের (কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক) সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদেরকে আহত অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মুনতাসির মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুনতাসির মাসুদ বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মুনতাসির তার পরিবারের সঙ্গে কলাবাগানে থাকতেন। আহত অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। আহত এই দুইজন শিক্ষার্থী থাকতেন আহসান উল্লাহ হলে।
নিহত মুনতাসির মাসুদের (সিএসসি-২১ ব্যাচ, নজরুল হল) মরদেহ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত অপর দুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
আহতদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা ফাইয়াজ আহমেদ জানান, রাতে তিন বন্ধু মিলে বাইকে ঘুরতে বের হন। রাত ৩টার দিকে ৩০০ ফিট এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া প্রাইভেটকার মোটরবাইককে ধাক্কা দিলে তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়ে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক মুনতাসিরকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোর ৫টার দিকে আহত অন্য দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ৩০০ ফিট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বন্ধু আহত হয়। একজন কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যায়। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।