রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
সোমবার দুপুরে এই হামলা-সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
পুরান ঢাকায় অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়।
কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববার মিছিল করে যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে হামলা-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ছবি: নিউজবাংলা
এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুপক্ষে অনেকে আহত হন। তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রয়েছেন।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, তাদের কলেজে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। কলেজের টাকাপয়সাও লুট করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে রাজধানীর ৩৫টি কলেজের ছাত্ররা রোববার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তারা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।
এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজে সাতটি কলেজের পরীক্ষা চলছিলো। পরীক্ষার হলেও হামলা চালায় ছাত্ররা। তাদের তাণ্ডবে পরীক্ষা পণ্ড হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে এই পরীক্ষা স্থগি কর্তৃপক্ষ।
ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত রাতেই সেন্ট গ্রেগরি কলেজে হামলা চালান সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা। রাতেই তারা সংবাদ সম্মেলন করে সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা-ভাঙচুরের বিচার ও প্রশাসনিক কাগজপত্র ফিরিয়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। তারা কলেজের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে।
ওই ঘটনার জের ধরেই সোমবার ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ডিএমআরসির উদ্দেশে রওনা হন এই দুই কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যায়। অপরদিকে মোল্লা কলেজের ছাত্ররাও অবস্থান নেয় সড়কে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।