ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার অভিযোগ এনে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল ঘেরাও করেছেন রাজধানীর ৩৫টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা এ সময় হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন এবং নামফলক ভেঙে ফেলেন। এক শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। এ সময় ওই কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হন।
তাদের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, গিয়াসউদ্দিন কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, ইমপেরিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, ধনিয়া কলেজ, লালবাগ সরকারি কলেজ, উদয়ন কলেজ, আদমজী, নটরডেম, রাজারবাগ কলেজ, নূর মোহাম্মদ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, গ্রীন লাইন পলিটেকনিক, ঢাকা পলিটেকনিক, মাহবুবুর রহমান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন।
বিক্ষোভকালে ডিএমআরসির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে আমাদের সহপাঠী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু ও হামলার বিচার দাবিতে আজ সব কলেজের শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডক্টর মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) এইসএসসি ব্যাচ-২০২৪ এর শিক্ষার্থী অভিজিৎ মারা যান। এর একদিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত অভিজিতের রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিতে চান। সে সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়।
তারা বলেন, অভিজিতের মৃত্যুর পরও টাকা দাবি করে মরদেহ আটকে রাখে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ নভেম্বর ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা মরদেহ নিতে এলে কোনো সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরদিন ২১ নভেম্বর ডিএমআরসির শিক্ষার্থীরা আবারও ন্যাশনাল মেডিক্যালে গেলে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে পঞ্চাশজনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন। এদিন বিকেলে ফের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি জোনের এসি ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আশপাশের উৎসুক জনতাকে নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছি।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর
এদিকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে ঢাকার ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বই, আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভেতরে শিক্ষকের ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি বাইকের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। এছাড়া প্রতিটি অফিসকক্ষ ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করা হয়েছে।
চিকিৎসায় গাফিলতিতে সহপাঠীর মৃত্যু, মরদেহ আটকে রাখা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করেন বিভিন্ন কলেজের ইন্টারমিডিয়েটে পড়া শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজের প্রধান ফটকও ভাঙচুর করা হয়। এরপর তারা সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিকে এগুলে দুপক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শাহানাজ সিদ্দিকা বলেন, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়। আর দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ হামলা শুরু হয়। আমরা বিকেল ৩টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। নিচে আমরা কোনোমতে একটা জায়গায় লুকিয়ে ছিলাম। পরে দোতলায় উঠেছি।’
সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বার বার সাহায্য চেয়েছি। আর তাদের পক্ষ শুধু বলা হয়েছে যে তারা ন্যাশনাল মেডিক্যালে আছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তা পর্যাপ্ত ছিলো না। আমরা বার বার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছি কিন্তু পাইনি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’