ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে তৈরি হওয়া আলোচনার মধ্যে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১০টি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও। তবে ছাত্রলীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
গত শনিবার দুই পর্বে অনুষ্ঠিত এই সভার প্রথম পর্বে অংশ নেন ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম।
এ নিয়ে সেই পর্বের মিটিংয়ে উপস্থিত বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতারা আপত্তি তোলেন। পরে দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকে যোগ দেয়া ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠনও শিবিরকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তাদের দাবি, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ কনভেনশন অনুযায়ী ছাত্রশিবির ও ছাত্রসমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে সেই চুক্তিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
সেই সভা শেষে বের হয়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো দাবি করে, শিবিরকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্ন করেন তখন উপাচার্য বা প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট কেউ তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সে সময় তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছিল।
সেই উত্তরটা কী বা কেন শিবিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানতে চাইলে সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা (ছাত্র সংগঠন) পরিবেশ পরিষদের কথা বলছে। কিন্তু পরিবেশ পরিষদ ডাকতে হলে তো আমাদের ছাত্রলীগকেও ডাকতে হবে। আর পরিবেশ পরিষদ যখন গঠন করা হয়েছে তখনকার বাস্তবতা আর এখনকার বাস্তবতা এক নয়।’
প্রক্টর বলেন, ‘কয়েকটি কারণে আমরা শিবিরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্রথম কারণ হলো, আমরা বিভিন্ন পর্যায় থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বা আন্দোলনের পর ছাত্রশিবিরসহ ৩৫টি ছাত্রসংগঠন বিভিন্ন সময় সভা করেছে।
‘দ্বিতীয় কারণ হলো, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের মুরব্বি সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর যে গুরুত্ব বা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের যে অ্যাকসেস সেটি একটি বিবেচনা।’
‘আর সর্বশেষ কারণ হলো, ছাত্রশিবির রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন না। তাহলে আমাদের জায়গা থেকে ছাত্রশিবিরকে এক্সক্লুড করার কী কারণ থাকবে? যদি করি তাহলে তো আমরাও সেই বৈষম্যই করলাম।’
প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রশিবিরকে অনেকেই অপছন্দ করবে। এটা তারা বলতেই পারে। কিন্তু প্রশাসনিক জায়গা থেকে আমরা যদি আমাদের সভায় ছাত্রশিবিরকে না ডাকি তাহলে এটা আগের স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ হবে।’
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সংস্কার
এদিকে সেই মতবিনিময়ে অংশ নেয়া প্রায় সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি জানান।
সভার দুই পর্বে ছাত্রসংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশ
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এই বৈঠকের পর ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে ফেসবুকে ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের পক্ষে স্ট্যাটাস দেন। এর মাধ্যমে প্রায় এক যুগ পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আসে জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠন।
এরপর গত রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশ পায় ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারির নাম। কাদেরের স্ট্যাটাসে লিখেন, ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি ফরহাদের সাথে আলোচনা করেই তারা আন্দোলনের সেই নয় দফা প্রস্তুত করেন। এবং এই নয় দফা দেশি এবং বিদেশি মিডিয়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে শিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরে ঢাবি শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম নিশ্চিত করেন যে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে যে ফরহাদের কথা উল্লেখ করেছেন সেটি সঠিক।
তিনি জানান, ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারির সম্পূর্ণ নাম এস. এম ফরহাদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।