আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা পেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যেই আন্দোলন ঘিরে গ্রেপ্তার হওয়া সব বন্দির মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করবো। সেই জাতীয় সরকারে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের অংশ থাকবে এবং নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিভিন্ন পক্ষ থাকবে।
‘সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও সেই সরকারে কারা কারা থাকবেন তাদের নাম ঘোষণা করবো।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আমরা কিন্তু আর কোনো সরকার সমর্থন করবো না। সেনা-সমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার- এ ধরনের সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।
‘যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাদের আমরা জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করছি। এছাড়া যারা এই ফ্যাসিস্ট রেজিমে শহীদ হয়েছেন তাদেরও স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন কোনো সুযোগ না পায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।’
পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
সাংবাদিকদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের সব আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সবাইকে সুন্দর আচরণ করতে বলব। কেউ যেন তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।’
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এমন হতাহত হয়নি। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী সরকার এটি ঘটিয়ে এখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি।
‘আজ সকালেও আমাদের ওপর গুলি করা হয়েছে। তাই এই ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে রাত ৮টার সময় করা আরেক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আমি এ দেশের ছাত্র-জনতাকে বলব- প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের সংখ্যালঘু ভাইবোনদের রক্ষার্থে সবাই দাঁড়িয়ে যান- যাতে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদযাপন করছে। প্রত্যেকটি জায়গায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে অবস্থান নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি; যাতে পরাজিত শক্তি এ দেশের মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতে না পারে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘তারা এখন মুখোশ পাল্টে সাধারণ ছাত্র-জনতার ভেতরে ঢুকে এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
গণমাধ্যমের ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের কর্মীরা আমাদের বন্ধু। গণমাধ্যমের ওপর কোনো আক্রমণ নয়, গণমাধ্যমের ওপর কোনো হামলা নয়। গণমাধ্যম আমাদের তথ্যগুলো তুলে ধরেছে।’
মাসুদ আরও বলেন, ‘আমি এখান থেকে বলছি, বাংলাদেশে এই মুহূর্তের পর থেকে আর কোনো আগুন জ্বলবে না। আর কোথাও কারও ওপর হামলা হবে না। আমাদের কোনো প্রতিশোধ নেই। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলো। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে বিচার করার ব্যবস্থা আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা থাকবেন তারা করবেন।’