কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করতে না পারলে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিনের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এর আগে একই দাবিতে অপরাজেয় বাংলায় সকাল ১০টায় লোকপ্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে একটি সমাবেশ হয়। এরপর একই জায়গায় সমাবেশ করে অর্থনীতি বিভাগ।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিকে শিক্ষকরা ছাতা নিয়ে দাঁড়ালেও এক শিক্ষক ‘শিক্ষার্থীদের রক্তের কাছে এ বৃষ্টি কিছুই না’ বক্তব্যের পর তারা ছাতা গুটিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কর্মসূচি পালন করেন।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের অনেক ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পালিয়ে যাচ্ছিল সেই অবস্থায় গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পড়ে থাকা অবস্থায় গুলি করা হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের ছাত্র হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু এই হত্যার জন্য সরকার প্রধানের কোনো কান্না নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে যে আমাদের শিক্ষার্থী শিশুরা মারা গেছে সন্ত্রাসীদের গুলিতে। অথচ চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের ইউনিফর্ম পরে গুলি করা হচ্ছে। ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কীভাবে গুলি করা হচ্ছে।
‘আমরা কোন আন্দোলনকারীর হাতে অস্ত্র দেখিনি। এই ধরনের বক্তব্যের পর আমাদের মনে হয়, সরকার এই হত্যার বিচার করবে না। কারণ এই সরকার নিজেই খুনি।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে গণহত্যার পর গণহত্যার সংখ্যা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়। এই সরকার গণহত্যা করার পর গণহত্যার শিকারদের উল্টো গণহত্যার জন্য দায়ী করে গ্রেপ্তার করছে। ধিক্কার জানাই এই সরকারকে।
‘তরুণরা হচ্ছে বাংলাদেশের হৃদয়। এই হৃদয়কে আঘাত করা হবে আর আমরা চুপচাপ মেনে নেব এটা যেন সরকার না ভাবে। আমাদের ছাত্রদের অনিরাপদ রেখে আমরা শান্তিতে বসে থাকব না। এখন দাবি এসেছে সরকারের পদত্যাগের। খুনের বিচার না করতে পারলে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে অবশ্যই পদত্যাগ করুন।’
পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে পুলিশ আমার শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছে। তাকে কথা বলতে দিচ্ছে না। এই বাংলাদেশ কি আমরা দেখতে চেয়েছি?
‘আমরা মানবাধিকারের কথা বলি, উন্নয়নের কথা বলি। অথচ প্রতিনিয়ত আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আমাদের সহকর্মীর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
কর্মসূচিগুলোতে আরও বক্তব্য দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম, অধ্যাপক সাদিক হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক সেলিম রায়হান, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক প্রমুখ।
বক্তব্য শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথমে রাজু ভাস্কর্যে যান। এ সময় তারা ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘যে হাত ছাত্র মারে, সে হাত স্বৈরাচার’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত- আমার বোনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। এ সময় তিনি ক্যাম্পাস থেকে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপসারণ দাবি করেন। এরপর সেখান থেকে মৌন মিছিল নিয়ে সবাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। সেখানে নিহত ছাত্র-জনতার স্মরণে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।