বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশি বাধা

  • প্রতিনিধি, ঢাবি   
  • ৩১ জুলাই, ২০২৪ ১৯:৩১

হাইকোর্টের সামনে থেকে চার শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের তোপের মুখে অপর দুই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। আটক আরেক শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ।

বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন থেকে মিছিল শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের এই দলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড়ের দিকে এগুলে শিশু একাডেমির সামনে পুলিশ আটকে দেয়। বাধার মুখে সেখানেই বসে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এ সময় হাইকোর্ট মোড়ের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল এসে এই অবস্থানে যোগ দেয়। প্রায় আধ ঘন্টা সেখানে অবস্থানের পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে ফিরে আসেন। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরাও।

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দোয়েল চত্বরে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, পুলিশ তাদের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে রেখেছে। তাদের ছেড়ে তারা অবস্থান ছাড়বেন না। পরে শিক্ষকদের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তাদের ছাড়িয়ে আনে। এ সময় সেখানে শিক্ষকদের পাশাপাশি আইনজীবীরাও ছিলেন। সেখানে উপস্থিত থাকা দুই শিক্ষক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মো. কামরুজ্জামান।

এরপর শিক্ষকদের একটি অংশ চলে গেলে বাকি শিক্ষকরাসহ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিক‍্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ হয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে একজন অভিভাবক এবং ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বক্তব্য দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিজ নিজ ক্যাম্পাস আর বাসায় ফিরে যান।

আটক শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে আহত হন ঢাবির শিক্ষক শেহরীন আমিন। ছবি: নিউজবাংলা

বক্তব্যে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেটিকে আমরা নাম দিয়েছি জুলাই ম্যাসাকার। এটি ইতিহাসে জুলাই ম্যাসাকার হয়ে থাকবে। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে পারিনি এজন্য আমি লজ্জিত। যে ক্ষতি হয়ে গেছে সেটি আর ফিরিয়ে আনতে পারব না। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমাদের। এই দেশ আমরা কাউকে লিজ দেইনি। এই দেশকে আমরা এভাবে চলতে দেব না। এসব হত্যাকাণ্ড আমরা মেনে নেব না।’

হাইকোর্টের সামনে থেকে আটক ৪

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি দুপুর সাড়ে ১২টায় হাইকোর্টের সামনে হওয়ার কথা ছিলো। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১২টা থেকে এখানে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। যাকেই সন্দেহ হয় তাকেই আটক করে পুলিশ।

দুপুর ১টা একটা পর্যন্ত হাইকের্টের সামনে থেকে চারজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা যায় পুলিশকে। প্রিজন ভ্যান চলে যাওয়ার সময় একজন নারী শিক্ষার্থী ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে যান। তিনি তার ভাইদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। পুলিশের নারী সদস্যরা সেই শিক্ষার্থীকে সরিয়ে দিলে ভ্যানটি আটক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

একই সময়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের ভেতরে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। কিন্তু তাদের কর্মসূচি শুরুর আগেই হাইকোর্টের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে তারা বাইরে বের হতে পারেননি। কিন্তু বাইরে শিক্ষার্থীদের আটকের খবর পেয়ে কিছু আইনজীবী গেটের পাশের ব্যারিকেড টপকে শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। পরে তারা কিছু শিক্ষার্থীকে ভেতরে নিয়ে আসেন।

আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, তৈমুর আলম খন্দকার, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

তোপের মুখে ছেড়ে দেয়া হয় দুই শিক্ষার্থীকে

অন্যদিকে একই সময়ে শিক্ষার্থীরা নানাদিক থেকে জড়ো হয়ে মৎস্য ভবনের মোড় থেকে মিছিল নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছলে তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ফিরে যাওয়ার সময় মৎস্য ভবন মোড়ে মিছিলের পেছন দিক থেকে হঠাৎ দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাইকোর্টের মোড়ে দুই শিক্ষার্থীকে গাড়িতে তুললে আইনজীবীরা প্রিজন ভ্যানটি সামনে থেকে ঘিরে ধরেন এবং তারা শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-আইনজীবীদের তোপের মুখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আটক দুই শিক্ষার্থীর নাম নাহিদ ও আরিফ। তারা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

পুলিশের ধাক্কায় আহত ঢাবি শিক্ষক

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে যোগদান করতে এসে পুলিশের হাতে আটক হওয়া থেকে শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় পড়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া। তিনি চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট মোড়ের দিকে আসার সময় এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি ঘটে শিক্ষার্থীদের। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নুসরাত জাহান চৌধুরী এবং প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া বাধা দেন।

এ সময় সেখানে থাকা রমনা জোনের এসি মোহাম্মদ ইমরুল ছাত্রটির কলার ধরে শিক্ষকদের বলতে থাকেন, ‘আপনি তাকে ছাড়েন।’ এ সময় শিক্ষক শেহরীন আমিন বলেন, ‘সে কী করছে বলেন।’ ইমরুল তখন বলেন, ‘তার ফোন চেক করে ছেড়ে দেব।’ তখন শিক্ষক বলেন, ‘আপনি তার ফোন চেক করতে পারেন না।’ ইমরুল ছাত্রের কলার ধরে টেনে নিয়ে আসেন।

তবে শেহরীন আমিন ছাত্রটির হাত ধরে রাখলে ইমরুল বলেন, ‘আপনি হাত ছাড়েন নইলে আমি ফোর্স অ্যাপ্লাই করব।’ শেহরীন আমিন ছাত্রটিকে ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে পুলিশ ধাক্কা দিলে শেহরীন আমিন মাটিতে পড়ে যান। পুলিশ ছাত্রটিকে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরে শেহরীন আমিন বলেন, ‘বোরহানুদ্দীন কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ও আমার সহকর্মী নুসরাত জাহান গিয়ে বাধা দেই। পুলিশকে বললাম তার অপরাধ কী? পুলিশ বললো- তাকে চেক করব।

‘আমি পুলিশকে বলি- চেক করার থাকলে এখানে করেন। আমাদের ব্যাগ, ফোন চেক করেন। পুলিশ তখন বার বার বলছিল, আমি কিন্তু বলপ্রয়োগ করব। এরপর পুলিশ ধ্বস্তাধস্তি করে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি ওই শিক্ষার্থীর হাত শক্ত করে ধরে রাখছিলাম। তখন একজন পুলিশ আমার হাত ধরে মুচড়ে দেয় ও আমাকে ধাক্কা দেয়। হাত মুচড়ে দেয়াতে হাতে একটু বেশি ব্যথা পেয়েছি। এর বেশি বলার মতো শক্তি আমার নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর